বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালী জাতির সম্পদ
রাকিব হাসান:
দোয়েল ও বাবুই পাখি ছিলো তাঁর ভীষণ প্রিয়। বাড়িতে শালিক ও ময়না পুষতেন। আবার নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতারও কাটতেন। বানর ও কুকুর পুষতেন বোনদের নিয়ে। পাখি আর জীবজন্তুর প্রতি ছিল তাঁর অপরিসীম মমতা। মাছরাঙা ডুব দিয়ে কীভাবে মাছ ধরে তাও খালের পাড়ে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে তিনি পর্যবেক্ষণ করতেন। ধন ধান্যে পুষ্প ভরা রূপসী বাংলার সবটুকু রূপ ছিলো তাঁর গ্রামে। বলা যায়, আবহমান বাংলার আলো-বাতাসের সংস্পর্শে বেড়ে উঠেছেন তিনি।
ফুটবল ছিল তাঁর প্রিয় খেলা। তাঁর শৈশব কেটেছে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে; আর বর্ষার কাদা মাটিতে ভিজে। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতো। শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকেই ছিল তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। শৈশবে তৎকালীন সমাজের জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা নিপীড়ন দেখেছেন খুব কাছ থেকে। গ্রামের হিন্দু-মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তাঁকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার দীক্ষা দিয়েছে।
সাধারণ মানুষের কষ্ট, খেটে খাওয়া মানুষের গ্লানি, দীর্ঘশ্বাস তাঁর হৃদয়ে ঝড় তুলতো। সেকারণে অকৃত্রিম ভালবাসায় যেকোনো দু:খী মানুষকে নির্দ্বিধায় বুকে টেনে নিতে পারতেন। মূলত সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং ন্যায়ের প্রশ্নে নির্মোহ থাকতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোনো শক্তির কাছে— সে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পণ করেননি; মাথানত করেননি।
সে কারণেই অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এদেশের মানুষ তাঁর হাতেই তুলে দিয়েছিলেন নেতৃত্বের দায়ভার। নিরাশ করেননি তিনি। ৭ই মার্চের কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াবার যে মানসিক শক্তি যুগিয়েছিলেন তা সহস্র পারমানবিক শক্তির চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
বজ্রকন্ঠে তিনি যখন আওয়াজ তুলেন তখন তা সাধারণ মানুষের প্রাণের কথা হয়ে সাতকোটি বাঙালির প্রাণে অনুরণিত হয়। শুধু তাই নয়, তাদের প্রাণের গহীনে জমে থাকা প্রচন্ড ক্ষোভের অনলে পুড়িয়ে দেয় শত্রুপক্ষকে। জন্ম হয় বাংলাদেশ নামের একটি দেশের। আর সেই দেশটির নেপথ্য কারিগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই সেই মহান নেতা সম্পর্কে শুধু একটি কথাই বলতে হয়, তিনি কোনো দলের সম্পত্তি নন, বরং তিনি দল-মত-নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালী জাতির সম্পদ।
তাঁর শাহাদাত বার্ষিকীতে আজ শুধু একটি কথাই মনে আসে-
”যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই”।