বন্ধ হতে পারে হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা টিভি

প্রকাশঃ জুলাই ৩০, ২০২১ সময়ঃ ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের পদ হারানো ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের আইপি টিভি জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসে অভিযান চালিয়েছেন র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় টেলিভিশন চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র পায়নি র‌্যাব। তদন্ত করে যদি বৈধ কাগজপত্র পাওয়া না যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন র‍্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাত ৪টার দিকে অভিযান পরিচালনা শেষে তিনি বলেন, ‘রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জয়যাত্রা নামে তার একটি আইপি টেলিভিশন রয়েছে। তার দেয়া তথ্যমতে মিরপুর জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু টেলিভিশন চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। যদিও সম্প্রচার চ্যানেল হিসেবে যেসব সেটাআপ থাকা দরকার তার সবকিছুই রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ার কারণে পরবর্তীতে তদন্ত করে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়া এখানে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের অফিস পেয়েছি। এ বিষয়েও তদন্ত করা হবে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান শুরু করে র‌্যাব। রাত ১২ টার দিকে অভিযান শেষে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া জব্দ করার বিষয়টি র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মঈন।

এদিকে, অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‍্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২৫ জুলাই (রোববার) আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে।

জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এই ব্যবসায়ী এবছর ১৭ জানুয়ারি উপকমিটির সদস্য হয়েছিলেন। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন।

সম্প্রতি চাকরিজীবী লীগ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নাম যুক্ত করে নতুন সহযোগী সংগঠন গঠনের ঘোষণা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি।

তার এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত হন খোদ আওয়ামী লীগেরই শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এরই সূত্র ধরে শনিবার (২৪ জুলাই) হেলেনা জাহাঙ্গীরের সদস্য পদ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটি থেকে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, একটা উপকমিটিতে থাকলে কাজ করার জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। তার কর্মকাণ্ডে উপকমিটি বিব্রত। তাই তাকে সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।‌ কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন বলেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য গত মাসেই তাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঐ চিঠির জবাব দেননি তিনি। এজন্য নির্দিষ্ট সময় পর এটা স্বাভাবিকভাবেই অব্যাহতি হয়ে গেছে। কাজেই বলা যায়, বর্তমানে তিনি ঐ কমিটিতে আর নেই।

ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে চাকরিজীবী লীগের সভাপতি দাবি করেন এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করেন। এমন ঘটনায় ফেসবুকজুড়ে সাধারণ মানুষের ভেতরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ফেসবুক ব্যবহারকারী তানজির আহমেদ সিহাব পোস্টে কমেন্ট করেন, আওয়ামী লীগের মতো একটা পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দলকে নিয়ে আপনারা যা শুরু করেছেন এটা হাস্যকর। এখন যারা নব্য আওয়ামী লীগার তারা কখনো বুঝবে না, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দল ছিল সেই সময় কত ত্যাগ ছিল আমাদের।

আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী আসিফুর রহমান বলেন, লোক হাসাচ্ছেন, আওয়ামী লীগকে ডোবাচ্ছেন। আজকে আওয়ামী লীগের খারাপ কিছু হলে এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এদিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকেও কমেন্টে প্রায়ই মারমুখী হতে দেখা যায়। তবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের অকস্মাৎ এমন ঘোষণায় মূল সংগঠনের নেতাকর্মীরা যে বিব্রত এটি তাদের উদ্ধৃতি থেকেই বোঝা যায়।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G