বস্তার মইদ্যে থাকব না তো কম্বলের মইদ্যে থাকব ?

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫ সময়ঃ ২:৪৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:০১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

images২২মধ্য মাঘ। শুক্রবারের এক রাত। ঘড়ির কাঁটা ১২টায় ছুঁইছুঁই করছে। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে প্রকৃতিতে বসতি গেড়েছে শীত। সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকাও শীতের প্রকোপে তখন জবুথুবু।

ঘটনাস্থল কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা। স্টেশনের বাইরের সড়কে বস্তার ভেতর ঠাসাঠাসি করে দেহ লুকিয়েছে দুই শিশু। শীতের রাতে ঘুম নেই চোখে, তবুও ঘুমিয়ে থাকার ভঙ্গিমা। এমন মধ্যরাতে শিশিরের টপটপ ফোঁটা দুই শিশুর শরীরে যেন একেক খণ্ড বরফ হয়ে পড়ছে।

দুই শিশুর একজন কবির (১৪) অপরজন মনির (১২)। শহরের অলিগলিতে এই দুই ভাই ভাঙারি কুড়িয়ে বেড়ায়। যখন সূর্য প্রায় ডুবুডুবু সংগৃহিত ভাঙারি বিক্রি করে দুজন। তা দিয়ে চলে তাদের জীবিকা।

শহরের ব্যস্ততা যখন কমে আসে, যখন জনশূন্য সড়কে রাত যখন গভীর হয়ে আসে তখন সুযোগ বুঝেই দুই ভাই আশ্রয় নেন সড়কের কোনো এক ফুটপাতে। শুক্রবার রাতও তার ব্যতিক্রম নয়।

তোমাদের বাড়ি নেই? শীতের রাতে ফুটপাতে শুয়ে আছো যে, প্রশ্ন শুনে বস্তার ভেতর থেকে নড়েচড়ে উঠল দুই সহোদরই। ছেঁড়া বস্তার এক ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে কবির জবাব দিল, বস্তার মইদ্যে থাকব না তো কম্বলের মইদ্যে থাকব? আমাগো কপালে বস্তাই আছে।

কবিরের কথার সঙ্গে এবার তাল মেলায় মনিরও। কবিরের কাছ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে সে বলে, মা-বাবা থাকলে শীতের রাইতে এত কষ্ট করা লাগত না। মায়েরে বিচড়াইতাছি (খোঁজ)। মা থাকলে কাঁথা কিইন্যা দিত।

শীতের কাপড় কেনা হয়নি কেন জানতে চাইলে কবির বলে, গেছিলাম কিনতে। দিনভর যে টাকা কামাই হেইড্যা দিয়ে শীতের কাপড় হয় না। তাই দুই ভাই মিইল্যা এই বস্তা কিনছি।

news_imgরাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি এলাকার ফুটপাতে শুয়ে ছিলেন ১৪ বছরের কিশোরী আমিনা। শীতের এ রাতে তার শরীরে পাতলা পুরনো সালোয়ার কামিজ। আমিনাও জানে না কোথায় তার বাবা-মা।

সারাদিন বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে খাবার চেয়ে নিয়ে সে মেটায় পেটের ক্ষুধা। রাত হলেই সে ঘুমিয়ে পড়ে শহরের কোনো ফুটপাতে।

আচ্ছা, তোমার শীত লাগে না? এই প্রশ্নের উত্তরে আমিনার জবাব-লাগে তো, কী করুম? কাপড় থাকলে তো শীতের রাতে কষ্ট করা লাগত না। রাত পার হোক সূর্য উঠলেই শীত লাগত না।

কেবল কমলাপুর রেলস্টেশন কিংবা শাহজাহানপুর নয়, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ফার্মগেইট, কারওয়ান বাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত, চাঁনখারপুল, গুলিস্তান, পল্টনসহ প্রায় প্রতিটি এলাকার সড়কে ছিন্নমূল মানুষ ও পথশিশুরা এভাবে শুয়ে থাকেন, চেষ্টা করেন শীত নিবারণের।

আমিনার মতো এদের প্রত্যেকেই নিশ্চয় রাতের কুয়াশা কাটিয়ে অপেক্ষা করেন সকালে টগবগে লাল সুর্যের। তারপর আবারও সেই পেটের ক্ষুধায় শহরের পথে পথে ছুটে চলা, আবার শীতের কুয়াশায় ঘুমিয়ে পড়া কিংবা জেগে থাকা।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদুল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G