বাংলাদেশীর আবিষ্কার: ২০ পয়সায় এক ইউনিট বিদ্যুৎ

প্রকাশঃ জুলাই ১৪, ২০১৬ সময়ঃ ১২:০৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:০৩ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

ekectricity-natore

মানুষের একটি অপরিহার্য চাহিদা বিদ্যুৎ। কিন্তু দিন দিন বিদ্যুৎ এর দাম বেরেই চলেছে। গত ৭ বছরে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে ১৩ দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। বর্তমানে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম গুনতে হয় তিন টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৯৮ পয়সা পর্যন্ত। কিন্তু  নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জুনাইদ পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানির প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন উদ্ভাবন করেছেন একটি অসাধারণ যন্ত্র , যেখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়বে মাত্র ২০ পয়সা।

কোম্পানিটি পরীক্ষামূলকভাবে ২৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ঐ যন্ত্রে ১০ মিনিট জ্বালানি ব্যবহারের পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে এ কম্পানি জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দিতে পারবে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন এই যন্ত্র দেখে বলেন, ‘বিদ্যুৎ জেনারেশন (উৎপাদন) ও ট্রান্সমিশন (সঞ্চালন) বিষয়ে নানাভাবে যাচাই-বাছাই করেছি। কোনো অসংগতি পাইনি। এটাকে বলে ফিলার জেম। এই যন্ত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।’

বড়াইগ্রাম উপজেলার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামে প্রকৌশলী জালাল উদ্দিনের ভাড়া বাড়িতে ওই বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র বসানো হয়েছে।

জালাল উদ্দিন ১৯৭৪ সালের ১ আগস্ট সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকে ছিলেন ডানপিটে স্বভাবের এবং কোনো কিছু আবিষ্কারের নেশা তাঁর মাথায় ঘুরপাক করত। ২০০৫ সালে এমবিএ পাস করেন। একটি ব্যাটারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তখন থেকে কিভাবে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করতে থাকেন।

ফ্লাই হুইল, ইলেকট্রিক্যাল, রেটিও, অ্যাসেন্ট অ্যান্ড ডিসেন্ট, লেভেল, গ্র্যাভিটেশন অ্যান্ড মেকানিক্যালসহ নানা প্রকার বিদ্যুৎ শক্তির সমন্বয় করে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। তাঁর এই যন্ত্র তৈরি করতে ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তাঁর অত টাকা ছিল না। এ কারণে তিনি স্থানীয় দু-একজন ব্যবসায়ীকে নিয়ে গঠন করেন জুনাইদ পাওয়ার লিমিটেড কম্পানি। তিনি দাবি করেন, যন্ত্রটিতে প্রথমে বাইরের যেকোনো শক্তি জ্বালানি হিসেবে ১০ মিনিট ব্যবহার করতে হয়। এরপর পুনর্চক্রাকার (রিসাইকেল) পদ্ধতিতে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ যন্ত্রটি জ্বালানি শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে বাকি ৬০ শতাংশ সঞ্চালন করে। এর বিদ্যুৎ উৎপাদনে আউটপুট ৩.২ শতাংশ। এটি বায়ু ও শব্দদূষণমুক্ত।

জালাল উদ্দিন বলেন, ‘একটি পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র তৈরি করতে খরচ পড়বে দেড় মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যন্ত্রের দাম ও পরিচালনা খরচসহ ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ পড়বে মাত্র ২০ পয়সা। গ্যাস, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, সৌর, জল, পরমাণুবিদ্যুৎ এই যন্ত্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।’ তিনি জানান, একটি শক্তি ব্যবহার করে ১০ মিনিটে যন্ত্রটিকে সচল করা হয়। এরপর এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বাইরে থেকে বাড়তি জ্বালানি দিতে হয় না।

জুনাইদ পাওয়ার লিমিটেডের প্রকৌশলী হুসেন আলী বলেন, ‘একবার চালু করলে মেইন সুইচ বন্ধ না করা পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন চলতে থাকে।’

জুনাইদ পাওয়ার লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদুল আলম বলেন, ‘অর্থ সহায়তার জন্য আমরা ব্যাংকঋণের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু না করলে ঋণ দেবে না। ফলে আমাদের স্বপ্নপূরণ মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আমি এ বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

জুনাইদ পাওয়ার লিমিটেডের কর্মকর্তা চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘অর্থাভাবে আমাদের কাজ থেমে আছে। প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারব। শুধু তা-ই নয়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব।’

পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা রব্বেল আলী বলেন, ‘এত কম টাকায় বিদ্যুৎ পেলে কলকারখানা আরো বাড়বে। লোডশেডিং থাকবে না। দেশের চেহারা পাল্টে যাবে।’

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G