বাড়ি ছাড়ব না : মওদুদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশানের বাড়ির মালিকানা-সংক্রান্ত মামলার রিভিউ আবেদন (রায় পুনর্বিবেচনা) খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ১৫৯ নম্বর প্লটের বাড়িটি ছাড়তেই হবে মওদুদ আহমদকে। কিন্তু সকল আইনি প্রক্রিয়ায় হেরে গেলেও বাড়ি ছাড়ব না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
আজ রোববার এ-সংক্রান্ত রিভিউ আবেদনটি পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি বাড়ি ছাড়ব না। এটা আমার এবং মালিকের বিষয়। এটা সরকারের কোনো বিষয় নয়।’
তিনি বলেন, ‘এই বাড়িটির সঙ্গে আমার জীবন জড়িত। এই বাড়িতে বিশ্ববরেণ্য অনেক রাজনীতিক এসেছেন। আমার সন্তানেরা এখানে বড় হয়েছে। তাই এ বাড়িটি ছাড়ছি না।’
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘বিরোধী দলে থাকার কারণে সরকার এই বাড়ি ছাড়ার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। আদালতে রিভিউ খারিজ হয়েছে কিন্তু বাড়ি ছাড়ার কোনো অর্ডারতো আমাকে কেউ দেয়নি। বাড়ি ছাড়ার অর্ডার দিলে তখন আমি আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করব। আইনেরও অনেক দিক আছে।’
এর আগে আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে মওদুদ আহমদ নিজের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে আরো অংশ নেন, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
প্রসঙ্গত, দুদকের দাবি, বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তার স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ তার ইংল্যান্ড প্রবাসী ভাই মনজুরের নামে থাকা একটি আমমোক্তারনামার ভিত্তিতে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন। কিন্তু বাড়িটির নামজারি কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা ছিল।
মনজুর আহমেদ তার অনুকূলে নামজারি করার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট হাইকোর্ট এক মাসের মধ্যে মওদুদ আহমদের ভাইয়ের অনুকূলে নামজারি সম্পন্নের জন্য নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজউক আপিল করে। অন্যদিকে আমমোক্তারনামা সঠিক নয় এই অভিযোগে দুদক একটি মামলা দায়ের করে। ২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন বিচারিক আদালত।
এর বিরুদ্ধে তাদের আবেদন ২০১৬ সালের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মওদুদ আহমদ।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাই