বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের হুশিয়ারি বিএনপির

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৫ সময়ঃ ৬:১০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:১২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক,প্রতিক্ষণ ডট কম

sekina‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ সম্পূর্ণভাবে বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আর যদি একটি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে তবে এর সঙ্গে জড়িতদের আগামীতে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। খুনি ও অত্যাচারী এবং তাদের দোসরদের ভবিষ্যতে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

শুক্রবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ ‍হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, দমন-পীড়ন ও হত্যা-রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। গণবিচ্ছিন্ন শাসকগোষ্ঠী এখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে অবৈধ ক্ষমতা রক্ষার পাহারাদার বা লাঠিয়াল হিসেবে অপব্যবহারের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনেরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণের ভার দলবাজ, বিতর্কিত, স্বার্থান্বেষী ও সুবিধাভোগী কিছু কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট কতিপয় অতি উৎসাহী কর্মকর্তা এখন আইন ভঙ্গ করে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুনাম, ঐতিহ্য ও নিরপেক্ষতা নষ্ট করছে।

এই প্রেক্ষিতে পুলিশ, বিজিবি, ৠাব ও আনসার বাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সর্বস্তরের সদস্যের প্রতি পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়,  চলমান আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। এই আন্দোলন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ক্ষমতাসীনেরা কূটকৌশলে জনগণের আন্দোলনের বিরুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছে।
২০ দলের বিবৃতিতে বলা হয়, যানবাহনে বোমা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এ সবের দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে বিরোধী দলকে নিষ্ঠুর পন্থায় দমন করাই ক্ষমতাসীনদের ঘৃণ্য অপকৌশল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ভাই-বোনেরা, আপনারা এই অপকৌশল বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না।
বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলা হয়, বোমা হামলার ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী গোষ্ঠীর লোকেরা বোমা-অস্ত্র-গুলিসহ আটক হলেও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাদের ছেড়ে দিতে হচ্ছে। বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে তাদের দলের লোকদের ঝলসে যাওয়ার ঘটনাও সংবাদপত্রে প্রায়শই প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের কারও বিরুদ্ধেই আপনারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। অথচ পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মী, এমনকি আটক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পর্যন্ত বিনা তথ্য-প্রমাণে মামলা করা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে সাজানো বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলা হচ্ছে। পায়ে ও শরীরে গুলি করে গুরুতর জখম ও পঙ্গু করা হচ্ছে। যেখানে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে বিরোধী দল সমর্থকদের এবং অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের অসংখ্য লাশ। গুম-অপহরণ নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ১৭ হাজারের বেশি গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক করে  ও রিমান্ডে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও হেনস্তা করা হচ্ছে। বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুঠতরাজ ও পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।

আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, কতিপয় সুবিধাভোগী কর্মকর্তার জন্য আপনারা কেন নিজেদের সুনাম ও বাহিনীর ঐতিহ্য ক্ষুন্ন করবেন? মনে রাখবেন, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্খার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কেউ কখনো সফল হতে পারেনি। ন্যায়ের পথে থাকার কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্যকে এখন যদি বেআইনিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তবে ভবিষ্যতে তাকে যথাযথ মর্যাদায় পুনর্বাসিত করা হবে।
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে বন্ধের দাবি জানিয়ে ২০ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন, গুলি করে আহত করা, পাইকারী গ্রেফতার, বাড়িঘরে হানা দেওয়া বন্ধ করুন। শাসকদের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা না দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করুন।
আমাদের এ আহ্বানের পরেও আর যদি একটি বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটে, অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতন, গুম-অপহরণ বন্ধ না হয়, তাহলে এর সঙ্গে জড়িতদের আমরা আগামীতে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলবো। খুনী ও অত্যাচারী এবং তাদের দোসরদের ভবিষ্যতে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এছাড়া এ ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রতিটি এলাকা পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যকলাপ সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখুন। খুনি, নির্যাতনকারী ও গণবিরোধী ভূমিকা পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপকর্ম ও নাম-পরিচয় আপনারা তালিকাভূক্ত করে রাখবেন। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে রাখবেন। আগামীতে এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ২০ দলীয় জোট।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/রাতুল

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G