ব্যাচেলররা কি ফুটপাতে থাকবে?
রনজু মিয়া:
সম্প্রতি সারা দেশে জঙ্গি তৎপরতার জের ধরে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেওয়াই হচ্ছে না। যদিও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া না দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এরপরও যারা ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দিতে গড়িমসি করছেন তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন, তাহলে ব্যাচেলররা কি ফুটপাতে থাকবে?
ঢাকা শহরে ব্যাচেলর তথা অবিবাহিত তরুণ-তরুণীদের বাসা ভাড়া পাওয়া নিয়ে ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। তরুণদের চেয়ে এক্ষেত্রে তরুণীদের ভোগান্তি তুলনামূলক বেশি। সম্প্রতি জঙ্গি তৎপরতা এক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
এতদিন কারণ ছিল-ব্যাচেলর তরুণরা রাত করে বাসায় ফেরেন। তাদের কাছে অপরিচিত ব্যক্তিদের আনাগোনা বেশি থাকে। তারা হৈ-হুল্লোড় করেন, বিড়ি-সিগারেট খান। আর বাড়ির মেয়েদের দিকে নজর দেন! এসব কারণে বাড়িওয়ালা তো বটেই অন্য ভাড়াটিয়ারাও ব্যাচেলর তরুণদের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতে চান না। বেশির ভাগ সময় ব্যাচেলর তরুণদের জায়গা হতো বাড়ির ছাদের কাছে চিলেকোঠায়।
প্রশ্নহলো- সব ব্যাচেলর কি একইরকম? ঢাকা শহরে প্রতিষ্ঠিত ও নামকরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন ব্যাচেলররা। এমনিতেই বাবা-মা ছাড়া ছন্নছাড়া শহুরে জীবন যাপন করতে হয় তাদের; তার ওপর সবার নামে গড়পড়তা অপবাদ?
কেন বিবাহিত ‘ভদ্র’লোকেরা দেরি করে বাড়ি ফেরেন না? তারা বিড়ি-সিগারেট খান না? আর চারিত্রিকভাবে সব বিবাহিতই কি ধোয়া তুলসীপাতা? তাহলে সব রাগ ব্যাচেলরের ওপর কেন? বরং এটা খুব প্রচলিত পরিহাস যে, মেয়ে বিয়ে দিতে গেলে তো ঠিকই ব্যাচেলরদেরই খোঁজেন। ‘বিবাহিত ভদ্র’দের তো খোঁজেন না।
অবিবাহিত তরুণীদের বাসা ভাড়া নেওয়া ভোগান্তির আরেক নাম, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। ঢাকা শহরে মেয়েদের জন্য আবাসস্থলের সংখ্যা কয়টি। সরকারি কর্মজীবী হোস্টেলে কয়জন মেয়ের আশ্রয় হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হল-লাইফ পার করে তাহলে একজন মেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাবে?
তাই বাড়িওয়ালাদের বলছি, সতর্ক হওয়া ভালো, কিন্তু তা যেন অন্যের ভোগান্তি বাড়িয়ে না দেয় সেটাও মাথায় রাখুন। যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে বাড়ি ভাড়া দিন- তা সে ব্যাচেলরই হোক আর বিবাহিতই হোক। মনে রাখবেন, বিবাহিতরাও জঙ্গি সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন।
ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়ার এই ভোগান্তি দূর করতে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীকেও সহযোগিতা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আজকের ব্যাচেলর তরুণ-তরুণীই আগামীকালের বাড়িওয়ালা-বাড়িওয়ালী।
রনজু মিয়া: সাংবাদিক
========