ব্রেস্ট ক্যান্সারের সার্জারি করা যাবে একবারেই!
ব্রেস্ট ক্যান্সারের সার্জারিটা এ বার করে ফেলা যাবে এক বারেই। আর সেটা করা যাবে একেবারেই নিখুঁত ভাবে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের দুশ্চিন্তায় মহিলাদের ভুগতে হয় প্রায় সারাটা জীবনই। আর তার মরণ-যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে ব্রেস্ট ক্যান্সারের বেশির ভাগ রোগীকেই অপারেশনের টেবিলে যেতে যেতে হয় অন্তত বার দু’-তিনেক।
কিন্তু ব্রেস্ট ক্যান্সারের পুরোপুরি নিখুঁত সার্জারির জন্য এখন মহিলাদের আর দু’-তিন বার যেতে হবে না অপারেশন থিয়েটারে। এক বারেই তাঁদের স্তন বা স্তনগ্রন্থিতে বাসা বাঁধা, দ্রুত বেড়ে ওঠা আর ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার কোষগুলিকে কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া যাবে। সার্জারির পরেও আরও ক্যান্সার কোষ থেকে যাবে না স্তন বা স্তনগ্রন্থিতে। ক্যান্সার কোষ সারাতে বাদ দিতে গিয়ে বাদ পড়ে যাবে না স্তন বা স্তনগ্রন্থির সুস্থ, সবল, স্বাভাবিক কোষ, কলাগুলিও।
‘ক্যান্সার ডিটেকশন ইন হিউম্যান টিস্যু স্যাম্পল্স ইউজিং আ ফাইবার-টিপ পিএইচ প্রোব’ শীর্ষক সাড়াজাগানো গবেষণাপত্রটি নভেম্বরের শেষাশেষি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ক্যান্সার রিসার্চ’-এ। যার মূল গবেষক অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের এআরসি সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফরন্যানোস্কেল বায়োফোটোনিক্স (সিএনবিপি)-এর অধ্যাপক চিকিৎসক এরিক শার্টনার আর সহযোগী গবেষক অনাবাসী ভারতীয় চিকিৎসক প্রবীণ কুমার। প্রবীণ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার ডিটেকশন অ্যান্ড মেডিসিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।
কী ভাবে এ বার এক বারেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের সার্জারিটা করা যাবে, নিখুঁত ভাবে?
সদ্য আবিষ্কৃত যন্ত্রের খুঁটিনাটি
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্সার ডিটেকশন অ্যান্ড মেডিসিন বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর প্রবীণ কুমার ই-মেলে পাঠানো প্রশ্নের জবাবে আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘এখন ব্রেস্ট ক্যান্সারের সার্জারির অন্তত ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে মহিলাদের অপারেশনের টেবিলে নিয়ে যেতে হয় অন্তত বার দু’-তিনেক।
যে ভাবে ধরা পড়ে ক্যান্সার কোষ (বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত)
কারণ, একেবারে নিখুঁত ভাবে তাঁদের অপারেশন করানো যায় না। সার্জেনরা অপারেশনের টেবিলে স্তন বা স্তনগ্রন্থিতে বাসা বাঁধা সবক’টি ক্যান্সার কোষ, কলা এক বারে খুঁজে পান না। অনেক ক্ষেত্রেই স্তনের সুস্থ, সবল, স্বাভাবিক কোষ, কলাগুলির সঙ্গে অপারেশনের টেবিলে সার্জেনরা স্তন বা স্তনগ্রন্থিতে বাসা বাঁধা ক্যান্সার কোষ, কলাগুলিকে গুলিয়ে ফেলেন।
ফলে, ক্যান্সার কোষ, কলাগুলি বাদ দিতে গিয়ে স্তন বা স্তনগ্রন্থির সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক কোষ, কলাগুলিও দেদার বাদ পড়ে যায়। থেকে যায় কিছু ক্যান্সার কোষ, কলাও। এটাকে বলে ‘ক্যাভিটি শেভিং’। এই অসুবিধা দূর করতে আমরা বিশেষ এক ধরনের অপটিক্যাল ফাইবার বানিয়েছি। প্রথম বার সার্জারির টেবিলেই যা দিয়ে স্তনে বাসা বাঁধা সবক’টি ক্যান্সার কোষ, কলার হদিশ পেয়ে যাবেন অঙ্কোলজিস্টরা।’’
কী ভাবে সম্ভব হবে?
স্বাভাবিক কোষের পাশেই জন্মানো ক্যান্সার কোষ (সবুজ) প্রবীণের কথায়, ‘‘আমরা দেখেছি, স্তন বা স্তনগ্রন্থিতে বাসা বাঁধা ক্যান্সার কোষ, কলাগুলি খুব অ্যাসিডে ভেজা অবস্থায় থাকে। কারণ, ক্যান্সার কোষ ও কলাগুলি থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড বেরিয়ে আসে। আর সেই ল্যাকটিক অ্যাসিডও ক্যান্সার কোষ, কলাগুলিকে ভিজিয়ে রাখে।
ভিজিয়ে রাখে তার আশপাশের জায়গাগুলিকেও। কিন্তু স্তনের সুস্থ, সবল, স্বাভাবিক কোষ, কলাগুলি থেকে কোনও ল্যাকটিক অ্যাসিড বেরিয়ে আসে না। তাই আমরা চেষ্টা করেছিলাম, যাতে ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোনও রোগীকে এক বার সার্জারির টেবিলে তুলেই সার্জেনরা একশো ভাগ নিশ্চিত হতে পারেন স্তন বা স্তনগ্রন্থিতে বাসা বাঁধা ক্যান্সার কোষ, কলা ঠিক কতগুলি রয়েছে। বা সেগুলি ঠিক কী হারে বাড়ছে।
ঠিক কতটা দূর পর্যন্ত সেই ক্যান্সার কোষ, কলাগুলি ছড়িয়ে পড়ছে বা পড়েছে। আর সেটা করার জন্যই আমরা বিশেষ ধরনের একটি অপটিক্যাল ফাইবার বানিয়েছি। যা কোষ, কলায় অ্যাসিডের বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন রকমের, বিভিন্ন বর্ণের আলোর হরেক রকমের ব্রেস্ট ক্যান্সার সিগন্যাল দেবে। আদতে বিভিন্ন অ্যাসিড আর একই অ্যাসিডের বিভিন্ন মাত্রায় তার পিএইচ ফ্যাক্টরের তারতম্য ঘটে। সেই ফারাকটাই ধরে দেবে আমাদের বানানো অপটিক্যাল ফাইবার।
ফাইবারের একটি প্রান্ত স্ত্নের কোষ, কলাগুলিতে রাখলে তার অন্য প্রান্তটি অ্যাসিডের সেই মাত্রা মেপে, আলোর সিগন্যালের বাছ-বিচার করে তার পিএইচ ফ্যাক্টর কত তা মেপে নিতে পারবে।
আর সেটা জেনেই সার্জেনরা অপারেশন টেবিলেই বুঝে যাবেন আরও কিছু ক্যান্সার কোষ, কলা রোগগ্রস্ত স্তন বা স্তনগ্রন্থিতে থেকে গেল কি না। নাকি সার্জারির সময়ে কাটা-ছেঁড়া করতে গিয়ে ক্যান্সার কোষ, কলার সঙ্গে বাদ পড়ে গেল স্তনের সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক কোষ, কলাগুলিও।’’
প্রতিক্ষণ/এডি/তাজিন