ভাঙা সিম দিয়ে প্রতারণা
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
ভাঙা সিম-কার্ড নিয়ে মোবাইল স্টোরে গেল একজন৷ নতুন সিম কার্ড নেওয়ার সময় ঐ ব্যক্তি যে মোবাইল নম্বর বললেন, সেটি যদিও তার নয়৷ যে নম্বরের উল্লেখ করলেন তিনি, সেই নম্বরের অধিকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেল ১৪ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা৷
নিগম সোনি নামে এক ব্যবসায়ীও এক ব্যক্তি তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন তার মোবাইলটি আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর৷ মোবাইল চালু করার পর জানতে পারলেন, তার অজান্তে তারই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা৷ নিগমের অ্যাকাউন্ট থেকে যে চক্র ঐ টাকা উধাও করে নিয়েছিল, তার সঙ্গে জড়িত তিন অভিযুক্তকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা৷
বিশেষ অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) পল্লবকান্তি ঘোষ এ দিন জানান, আটককৃতেদর নাম সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্তোষ সাউ ও দীনেশ শেট্টি৷ এ দিন আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন৷ তবে এই চক্রের পাণ্ডা যে নাইজিরীয় ব্যক্তি, তার হদিস এখনও পায়নি পুলিশ৷
যেভাবে হল এই অভিনব সাইবার-প্রতারণাঃ
পুলিশ জানায়, একটি ভাঙা সিম-কার্ড নিয়ে মোবাইল স্টোরে গিয়েছিল সন্তোষ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ভাঙা সিমের পরিবর্তে নতুন সিম চেয়েছিল সে৷ স্টোরের কর্তব্যরত কর্মী যখন তাকে নতুন সিমটি দিচ্ছেন, তখন নিজের মোবাইল নম্বরের বদলে নিগমের নম্বর বলেছিল সে৷ নিগম যদিও এ সব কিছুই জানতেন না৷ ঐ সিম ‘নকল’ নিগম অর্থাত্ সন্তোষের মোবাইলে ‘ইনসার্ট’ করতেই ‘আসল’ নিগমের মোবাইল গেল বন্ধ হয়ে৷ পরদিন সিম রি-অ্যাক্টিভেট করানোর পরই তার মোবাইলে মেসেজ এল, আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ লক্ষ ৪৫ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে৷
আকাশ থেকে পড়লেন নিগম! কী ভাবে ব্যাঙ্কের গোপন তথ্য জানাজানি হল!
বিশেষ অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) জানান, সন্তোষরা নিগমের মতো অন্তত ১০ জনকে ‘ফিশিং মেল’ পাঠিয়েছিল৷ সেই মেলের উত্তর দেওয়ার সময়ই নিজের মোবাইল নম্বর থেকে শুরু করে ব্যাঙ্কের খুঁটিনাটি জানিয়েছিলেন নিগম৷ সেই সুযোগেই ভাঙা সিমের গল্প শুনিয়ে নিগমের মোবাইলের সিম নিজের মোবাইলে অ্যাক্টিভেট করে নিয়েছিল সন্তোষ৷ আর যতক্ষণ ডি-অ্যাক্টিভেট ছিল নিগমের ফোন, ততক্ষণে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা তুলে চারটি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছিল ঐ চক্র৷ ‘ফিশিং মেল’-এর উত্তরে যে সব তথ্য জানিয়েছিলেন নিগম, সেগুলির ভিত্তিতেই জাল নথি তৈরি করে ওই চারটি অ্যাকাউন্ট ‘ওপেন’ করা হয়েছিল৷ ভোপালের একটি অ্যাকাউন্টে ৮ লক্ষ টাকা ডিপোজিট, বড়বাজারের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ ও চেকের সাহায্যে টাকা উইথড্র ও তিন লক্ষ টাকার সোনা কেনা–সবই হয়েছিল ওই সাড়ে ১৪ লক্ষের বিনিময়ে৷
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর