মানব পাচার চক্রের মূল হোতাসহ আটক ৯

প্রকাশঃ মার্চ ২৪, ২০১৫ সময়ঃ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৫৩ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম

24-03-15-tangail_manpower-300x133সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেফতার করছে র্যা ব। এ সময় ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়।

নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ নিরীহ লোকদের বিনা পয়সায় মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে দালালের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ করত ওই চক্রটি। যাত্রীদের প্রথমে চট্টগাম থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে নিয়ে আসা হতো।

পরে টেকনাফ থেকে ধাপে ধাপে তাদের মালয়েশিয়াগামী মাছ ধরা ট্রলারে উঠিয়ে দেওয়া হতো। সমুদ্ররে মাঝপথে যাত্রীদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত দালালরা। নির্যাতন ও অনাহারে যাত্রীদের কেউ গুরুতর অসুস্থ বা মৃত্যুবরণ করলে তাদের সাগরে ছুড়ে ফেলা হতো।

টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ এর সিপিসি ৩ নম্বর কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, গত ১২ মার্চ তারিখে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে মো. আনিসুর রহমান ও একই উপজেলার বাগারাড়ী গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে ফজলু র‌্যাব  কার্যালয়ে এসে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে তারা জানান, প্রায় দুই মাস আগে মো. ইউনুছ আলী নামের এক মানব পাচারকারী দলের সদস্যের সহায়তায় মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে কক্সবাজার নিয়ে আসে জাহাঙ্গীর আলমকে (১৭) অভিযোগকারীর একজনের ছেলে)।

পরে ইউনুছ ফোনে আনিসুরকে (জাহাঙ্গীরের বাবা) জানান, তার ছেলে মালয়েশিয়ার কাছাকাছি আছে। এখন দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে তার ছেলেকে মালয়েশিয়া ঢুকতে দেবে। নতুবা তার ছেলেকে সাগরে ফেলে দেওয়া হবে। এ সময় মোবাইলেই জাহাঙ্গীরকে মারধর ও কান্নার শব্দ শুনিয়ে টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ দিতে থাকে। পরে আনিছুর র‌্যাব -১২ কে বিষয়টি জানায়।

পরে টাঙ্গাইলের র‌্যাব -১২-এর এক একটি বিশেষ আভিযানিক দল গত ২২ মার্চ তারিখ ভোর রাতে টাঙ্গাইল মডেল থানাধীন চৌবাড়ীয়া গ্রাম থেকে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রুবেল নামের এক মানব পাচারকারীকে চারটি পাসপোর্ট এবং ১১টি জাতীয় পরিচয়পত্রসহ গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল জানায়, সে ইউনুছ ও সহিদুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির সহায়তায় কক্সবাজার হয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া লোক পাঠিয়ে থাকেন। রুবেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শহিদুল ইসলামকে গত ২২ মার্চ একই এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

শহিদুল জানান, তার কাজ হলো স্থানীয়ভাবে লোক সংগ্রহ করে ইউনুছকে জানানো এবং ইউনুছের বোন জামাই শওকতের মাধ্যমে কক্সবাজার পাঠিয়ে দেওয়া। পরে শহিদুলরে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল শহরে থেকে জাফর মুন্সির ছেলে মো. শওকতকে গ্রেফতার করা হয়।

শওকতরে বাসা তল্লাশি করে মানব পাচাররে সময় লেনদেন সংক্রান্ত এক কোটিরও বেশি টাকার ব্যাংক রশিদ পাওয়া যায়। শওকতের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২২ মার্চ বিকালে চট্টগ্রাম অলংকার মোড় হতে আবু মোহাম্মদ এবং পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। আবু মোহাম্মদ ও পিন্টুকে গ্রেফতার করার সময় তাদের হেফাজত হতে সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া প্রেরণের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ১২ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।

আবু মোহাম্মদ ও পিন্টু কাছ থেকে জানা যায়, সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী যে সকল লোক সারাদেশ থেকে চট্টগ্রাম আসেন তাদের তারা গ্রহণ করেন এবং টেকনাফে অবস্থানকারী কালামের নির্দেশনা অনুযায়ী আনোয়ার নামক ব্যক্তির মাধ্যমে সকল লোক টেকনাফ পাঠান।

আবু মোহাম্মদ ও পিন্টুর দেওয়া তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে ১২ জন মালয়েশিয়াগামী যাত্রীকে মাইক্রোবাসযোগে টেকনাফে প্রেরণের সময় চট্টগ্রাম কর্ণফুলিব্রিজ এলাকা হতে ২২ মার্চ আনোয়ার নামক এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্য মতে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা হতে ২৩ মার্চ ভোরে মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম মূল হোতা ইউনুছকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রতিক্ষণ/এডি/রবি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G