হাকালুকি হাওরের জনজীবনে চরম বিপর্যয়

প্রকাশঃ এপ্রিল ২০, ২০১৭ সময়ঃ ১২:৪৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:২৯ অপরাহ্ণ

মাহমুদ এইচ খান, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি ঢলে প্রায় ১শত ১৩ কোটি ৬৫ লক্ষ মূল্যের বোরো ধান বিনষ্ট হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া আধা পাকা ধান পচে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে বিভিন্ন জাতের মাছ মরে ভেসে উঠছে। হাওরের পানি, মাছ ও পোকা খেয়ে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার গৃহপালিত পশু-পাখি। ফলে হাওর পাড়ের মানুষে জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।

মৎস অফিস সুত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে হাওরের যে বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছে তা পচে পানিতে অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া ও ক্ষার কমার কারণে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে। অ্যাসিডের মাত্রা ৮ দশমিক ৫-এর বেশি হলে পানির স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। এসব কারণে বিভিন্ন জাতের মাছ মরে ভেসে উঠছে। আর সেই মরা মাছ ও পানি খেয়ে হাওর পাড়ের খামারীদের গৃহপালিত পশু-পাখি মারা যাচ্ছে।

এদিকে এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে মাছ রক্ষায় কুলাউড়া মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে তিন দিন থেকে ছিটানো হচ্ছে চুন ও ঔষধ। হাওর পাড়ের মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য করা হচ্ছে মাইকিং। এতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং দ্রুত মাছ মরা বন্ধ হবে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের দাবি। তবে হাওরে কী পরিমাণ মাছ ও গৃহপালিত পশু মারা গেছে, এর কোনো পরিসংখ্যান মেলেনি। হাওরে মাছ মারা যাওয়ায় এবার জেলায় মাছ উৎপাদনে বিরোপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান ও মাছ পচে বাতাসের সঙ্গে ভয়ানক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে হাওর পাড়ের এলাকাগুলোতে। এতে করে মানুষজন স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারছেন না। পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মরা মাছ ভাসছে।

হাকালুকি হাওরে পানিতে ভাসতে থাকা মরা গৃহপালিত পশু বাতাসে ঠেলে পাড়ে নিয়ে আসতে দেখা গেছে। নিজের পালিত হাঁস মরা অবস্থা বিষন্ন মনে তা কুঁড়িয়ে আনছেন খামারিরা।

কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, পানি আমাদের ধান নিল, মাছ নিল। এবার আমাদের পালিত হাঁসও নিয়ে যাচ্ছে। অভাবের সংসার হাঁসের ডিম বিক্রি করে চলতো। হাঁস মরে যাওয়ায় এখন আর খেয়ে বাচার উপায় নেই।

কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, ধান পচে পানিতে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে মাছ মরছে। এমোনিয়া গ্যাসে আক্রান্ত মরা মাছ খেয়ে হাঁসও মারা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। প্রাথমিক অবস্থায় এ ব্যাপারে হাঁসের খামারিদের সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাই

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G