যোগাযোগের ধোঁয়াটে বাস্তবতা!

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১১, ২০১৫ সময়ঃ ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:২৯ অপরাহ্ণ

IMG_1796রাকিব হাসান: ফেসবুক, মোবাইল, ইন্টারনেট, চ্যাটিং , ইউটিউব, গুগল ,স্কাইপ সবই এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। দূর থেকে দেখা আর কাছ থেকে দেখা। সামনের মানুষকে দূরে দেখা, দূরের মানুষকে সামনে দেখা। এমন এক স্বপ্নীল, অলীক আর ধোঁয়াটে বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা। কাছের- দূরের, দূরের-কাছের সবার সাথেই বন্ধুত্ব হচ্ছে কিন্তু আক্ষরিক অর্থে অনুভূতি কি শেয়ার হচ্ছে?

অনুভূতির সবটুকু প্রকাশ কি মার্ক জুকারবার্গের ওয়েবপেইজে লাইকের পর লাইক দিয়ে ঘটানো সম্ভব? মোটেই না।

আসলে প্রযুক্তি আমাদের দিয়েছে গতি কিন্তু কেড়ে নিয়েছে অনুভূতি। যদিও আমরা মুহূর্তেই পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে ভিজুয়ালি যোগাযোগ করতে পারছি; সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, বন্ধুত্ব হচ্ছে, ঝালাই হচ্ছে- তবে সবই ভার্চুয়াল। এটাকে কি আপনি ফলপ্রসু যোগাযোগ বলতে পারবেন? যোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীহিসেবে আমার তা মনে হয়না।

কল্পনার সব রং যেমন পৃথিবীকে রাঙিয়ে তুলতে পারে না, তেমনি সব অবাস্তব বিষয় বাস্তবের আবহ নিয়ে ধরা দিলেই বাস্তব হয়ে যায়না। এটা একদিকে আমাদের মনোজগতে ইমাজিনেশন তৈরি করে বাস্তবতা থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে বিছিন্নতা (এলিনিয়েশন) নামক ভয়ানক ব্যাধির জন্ম দিচ্ছে। অবচেতনভাবে এ্যাবসট্রেকটকে রিয়েলিস্টিক মনে করার ইন্দ্রজাল তৈরি করে আমাদের চেতনা ও অনুভূতিকে নষ্ট করে দিচ্ছে, যা হয়তো আমরা বুঝতেই পারছি না।

একটি আধেয়কে (কনটেন্ট) চারটি প্রেক্ষিত দিয়ে অনুভূতির বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি -১.ইউটিউবে কনসার্টের ভিডিও দেখা ২. কোন বন্ধুর সহায়তায় স্কাইপিতে লাইভ কনসার্ট দেখা ৩.টিভিতে লাইভ কনসার্ট দেখা এবং ৪.সরাসরি উপস্থিত থেকে কনসার্ট দেখা — এই চারটি প্রেক্ষিত একজন অডিয়েন্সকে চার ধরনের অনুভূতি দেয়। কোনটা প্রকৃত অনুভূতি ??? অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে এটা বোঝার অনুভুতিও ব্যক্তিভেদে একেকরকম হবে। অনুভূতি বোঝার অনুভূতি যেমন পাল্টাচ্ছে, তেমনি বদলে যাচ্ছে অনুভূতি প্রকাশের(এ·প্রেশন) ধরণও।

এদিকে কখনও কখনও অনুভূতি প্রকাশের ভাষাকেও সাধারনীকরণ করে দিচ্ছে আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি। মানুষের আবেগের বহি:প্রকাশ- দু:খ-কষ্ট, হাসি-কান্না, উত্তেজনার মহূর্ত -এসব প্রকাশে স্বাভাবিক কিছু ভিন্নতা থাকলেও বর্তমানে কিছু কমনশব্দ, বাক্য, বানান, এখন মোবাইল, ফেসবুক এবং চ্যাটিং এ অনুভূতি প্রকাশের সহজাত প্রবণতা হয়ে যাচ্ছে। যেমন H R U ? , 10q , thnx, f9, gdn8, tc, r8, nxt, wlcm, lol, bro, gd mrn, bdw, nyw, sum1, 9c pic, cya, gna, wna. অবস্থাএমন দাঁড়িয়েছে, এভাবেই যদি অনুভূতি প্রকাশ না করা হয় তবে শুনতে হবে সেকেলে অথবা প্রযুক্তি প্রতিবন্ধির মতো কিছু বিশেষণ। অনেকটা বাংলা সিনেমাকে গালি দিয়ে জাতে উঠার মতো।

প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগের সহজলভ্যতায়- ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে কথা বলার প্রবণতা বাড়ছে , ফেসবুক আর স্কাইপির চ্যাটিং মধুর থেকে মধুরতর করে তুলছে, আর ‘যোগাযোগ‘ নামক বহু গবেষণালব্ধ বিষয়টিকে নিত্য নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি করার পাশাপাশি রিয়েলিস্টিক রিলেশন আর এ্যাবসট্রেকট রিলেশনকে বারবার নবরুপে সামনে এনে দাঁড় করাচ্ছে। আর প্রতিনিয়ত মনোজগতের প্রধান ফটকে এসে কড়া নেড়ে বলছে, বাস্তবতার প্যাকেটে পুরে কল্পনা আর অবাস্তবকে যেন মহা-বাস্তবতার দিকে চালান করে দেয়াহয়। কি ভয়ংকর কথা !!!!!

লেখক ও সাংবাদিক

ইমেইলঃ [email protected]

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G