রবীন্দ্রনাথ সুবিধাবঞ্চিত বাঙালিদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। তিনি এদেশের কৃষক মেহনতি মানুষের দুর্দশা গভীরভাবে উপলদ্ধি করেছেন। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করেছেন। কৃষক মহাজনদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে তিনি পতিসরে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি সমবায় ব্যাংক।
আজ সোমবার বিকেলে নওগাঁর পতিসর কাচারিবাড়ি দেবেন্দ্র মঞ্চে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিন দিন ব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আজ যখন বিশ্বের সর্বস্তরের উগ্র মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তখন রবীন্দ্র চর্চা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের মাটিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বীজ বপন করেছিলেন। তিনি নিজে মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। বরীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যকে পূর্ণতা দিয়েছেন। বিশ্ব সমাজে প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা দিয়েছেন।
আবদুল হামিদ বলেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল ও উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার স্মৃতিসম্ভার যেমন বিশাল তেমনি আপন মহিমায় তা বর্ণাঢ্য। কবির মানসপটে ছিল শিল্পের পরিশীলতা, আবহ প্রকৃতি, প্রেম আধ্যাতিকতা এবং তাতে সম্মিলন ঘটে বিশ্ব সভ্যতা দর্শন ও বিজ্ঞান। তিনি একাধারে কবি, সঙ্গীতঙ্গ, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। তিনি কেবল কালের কবি নন, সর্বকালের কবি।
লিখিত বক্তব্যের আগে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি। আর রাষ্ট্রপতির ফ্রি স্টাইলে বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ নেই। সব লিখে নিয়ে আসছে। লেখার বাইরে কোন কথা থেকে কোন কথা বইলা ফেলি ঠিক নাই। আমার যে সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, তারা ঘুরাইয়া প্যাঁচাইয়া, কীভাবে যে কী বলবে সেটা মুশকিল।’
বক্তৃতার শুরুতেই ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান শুনে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি এখন সব দল-মতের ঊর্ধ্বে। তাই এই স্লোগান এখন যেন কেমন কেমন লাগে।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি হয়েছি প্রায় চার বছর হয়ে গেছে। এর পূর্বেও আমি ছিলাম স্পিকার। সেখানে এত না হলেও আংশিকভাবে নিরপেক্ষ ছিলাম। ডেপুটি স্পিকার আর বিরোধীদলীয় উপনেতা থাকার সময় দলীয় কালার ছিল। যার জন্য এখানে যারা দলের নেতৃবৃন্দ, মাননীয় সংসদ সদস্য যারা আছে তা কেন জানি বারবারই আমাকে নিরপেক্ষতার জায়গায় পাঠিয়ে দেন।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিকের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মঞ্চে আরেকজন আছেন ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক সাহেব। মাননীয় মন্ত্রী। উনার সঙ্গে দীর্ঘকাল পরিচয়। উনি প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমি জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন থেকে জানাশোনা। কত বছর… প্রামাণিক সাহেব কোনোদিন বললেন না, এখানে আসেন।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘তবে আমি আপনাদের আশেপাশে ছিলাম। রাজশাহী জেলখানা এখান থেকে বেশি দূরে না। জেল খানায় সাত মাস ছিলাম। মরহুম জলিল সাহেব (আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) আমার সঙ্গে ছিলেন।’
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইব্রাহিম হোসেন খান, অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মোহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম, জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান প্রমুখ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় সংসদের হুইপ অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক এমপি, ছলিম উদ্দিন তরফদার এমপি, নওগাঁ পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি, আত্রাই উপজেলা চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মখলেছুর রহমান, রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাই