রহস্যঘেরা নিখোঁজের ঘটনা (প্রথম পর্ব)
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
কিছু কিছু ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না। ঘটে না বছর বা এক যুগেও। সেই ঘটনা গুলোর রহস্য কখনও বেড় করাও যায় না। প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। এসব মানুষের মধ্যে অনেকরই খোঁজ কোনোদিনই কেউ জানতে পারেন না। কিছু কিছু অন্তর্ধান সবার নজর কাড়ে! অনেক প্রশ্ন অনেক গবেষণাও চলে এসব অন্তর্ধান এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তেমনই শীর্ষ দশটি অন্তর্ধানের কথা পাঠকদের জন্য থাকছে আজ।
১. হ্যারল্ড হল্ট (প্রধানমন্ত্রীর রহস্যময় অন্তর্ধান) ১৯৬৭
১৯৬৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর। সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড হল্ট গেলেন পোর্টসি (Portsea), ভিক্টোরিয়া (Victoria) এর নিকটবর্তী চিভোয়েট বীচে (Cheviot Beach) সাঁতার কাটতে। কিন্তু তার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। তাঁর সন্ধান মেলেনি আজও। তন্নতন্ন করে খোঁজা হলো পাহাড়ি সব অঞ্চলে এবং সমুদ্রে। কিন্তু, কিছুতেই দেখা মিললো না এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের। ফলে বাড়তে লাগলো গুজবের ডালপালা।কেউ বলতে লাগলেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কারো বা সন্দেহ স্ত্রীর প্রতি রাগ করে গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউবা সন্দেহ করলো, নিশ্চয় চাইনিজ সাবমেরিন অপহরণ করেছে। ১৯০৮ সালের ৫ই আগস্ট জন্ম হ্যারল্ড ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ১৭তম প্রধানমন্ত্রী। অনেক বছর তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ কেবিনেট মন্ত্রী। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ৩২ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের বয়স মাত্র ২২ মাস। কারণ তার পর থেকেই আর সন্ধান মেলেনি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর।
২. জন ক্যাবট, ১৪৯৯ (ইটালিয়ান অভিযাত্রী গুম)
ইউরোপ থেকে এশিয়ায় আসতে পশ্চিমের সমুদ্র পথের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন বিখ্যাত অভিযাত্রী জন ক্যাবট। ১৪৯৯ সালের এই অভিযানে তার সাথে ছিলো কাঠের তৈরী পাঁচটি জাহাজ। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ছিলো ১০০ ফুট। কিন্তু, অভিযানে বের হবার পর জন ক্যাবট বা অন্য অভিযাত্রীদের আর সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ হবার দুই বছর আগে (১৪৯৭ সালে) ইউরোপের দ্বিতীয় অভিযাত্রী হিসেবে উত্তর আমেরিকায় পা ফেলেছিলেন জন ক্যাবট। এমনকি তাঁর জাহাজের ধ্বংসাবশেষ বা অন্য অভিযাত্রীদের লাশ পর্যন্ত আর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় প্রবলকোন ঝড়ে বা আইসবার্গে ধাক্কালেগে সবগুলো জাহাজ ধ্বংস হয়ে সবাই মারা যান। কারো বা সন্দেহ মারাত্মক কোন অসুখে মারা যান একে একে সবাই। সন্দেহ যাই হোক, ছয়শ বছর পরও নিশ্চিত হওয়া যায়নি কি ঘটেছিলো বিখ্যাত অভিযাত্রী জন অ্যাবট বা তার সঙ্গীদের ভাগ্যে।
৩. রাওল ওয়েলেনবার্গ, ১৯৪৫ (সুইডিশ নায়কের অন্তর্ধান)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরীর রাজধানী বুদাপেস্ট এ সুইডেনের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিলো রাওল ওয়েলেনবার্গকে। এসময় তিনি ২০ হাজার হাঙ্গেরিয়ান ইহুদীকে হিটলার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই, ইহুদীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন মহানায়ক। সাবেক সোভিয়েত সেনাবাহিনী হাঙ্গেরী দখল করার পর গ্রেফতার করা হয় রাওল ওয়েলেনবার্গকে। তার বিরুদ্ধে আনা হয় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ। তারপর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান এই দূত। ধারণা করা হয় সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মস্কোর লুবইয়ানকা কারাগারে। এমনকি ২০০১ সালে সুইডেন-রাশিয়ার দশ বছরব্যাপী চলা যৌথ গবেষণার পর বলা হয় সম্ভবত ১৯৪৭ সালের ৭ই জুলাই তিনি মারা যান। কিন্তু, এর বেশি কোন তথ্য জানাতে পারেনি যৌথ এ গবেষক দল।
৪. বিচারপতি জোসেফ ফোর্স ক্র্যাটার, ১৯৩০ ( এক বিচারপতির অন্তর্ধান)
একদমই অপরিচিত নাম হলেও, তার সময় তিনি ছিলেন বহুল আলোচিত। বলছি বিচারপতি জোসেফ ফোর্স ক্র্যাটার এর কথা। ১৯৩০ সালের ৬ই আগস্ট হঠাৎই গায়েব হয়ে যান নিউ ইয়র্ক সিটির এই বিচারপতি। সাথে ছিলেন তার বান্ধবী শেলী লউ রিতজি (Sally Lou Ritz)। সে সময়কালে মাফিয়া গ্রুপগুলোর সাথে অনেক বিচারকেরই সম্পর্ক থাকার গুজব রয়েছে। তাই, কারো অনুমান মাফিয়া দলে ভীড়ে গেছেন তিনি। অনেকেই আবার বলতে লাগলেন, উন্নত জীবনের আশায় ধনসম্পদ লুট করে লুকিয়েছেন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে। অনেক খোঁজা হলেও তার সন্ধান মেলেনি আর।
৫. চার্লস নানগীজার এবং ফ্রাঙ্কোইজ কোলি, ১৯২৭ (দুই পাইলটের অন্তর্ধান)
আকাশ পথে প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক। মাঝে পড়তো উত্তাল আটলান্টিক সমুদ্র। এখন প্রতিদিন এ পথে উড়োজাহাজের আনাগোনা হলে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত তো তা ছিলো স্বপ্নের মতো! কে আগে উড়ালপথে আটলান্টিক পাড়ি দিবে। তা নিয়ে চলছিলো দারুণ প্রতিযোগিতা। আর হ্যাঁ, এ সম্মান অর্জন করেছিলেন চার্লস লিন্ডবার্গ। কিন্তু, এ সাফল্যের কিছুদিন আগেই এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা হয় ফ্রান্সের পাইলটদের মধ্যে। প্যারিস থেকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছিলেন দুই পাইলট। চার্লস নানগীজার এবং ফ্রাঙ্কোইজ কোলি। কিন্তু, নিউ ইয়র্ক পৌঁছা হয়নি তাদের। মাঝপথেই হারিয়ে যান তারা। সমুদ্রে কিংবা পথের পাহাড়ি বনাঞ্চলে খুঁজেও উড়োজাহাজ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি এই দুই ‘সাদা পাখির’ মৃতদেহ।
তথ্যসূত্র:
১. জেফ ডেনেলেক, কলোরাডোর লেখক
২. অন্তর্জাল
প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে