শিক্ষাকে পণ্য ভাবার ফলাফল

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৫৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫৮ অপরাহ্ণ

এম. জাকির হোসেন খান

vatগত ১০ আগষ্ট থেকে ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’- এই দাবিতে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার অবশেষে বাধ্য হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের টিউশন ফি’র ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে ১৪ আগষ্ট। অথচ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গত ১১ আগষ্ট বলেছিলেন, ‘আগামী বছর থেকে তাদের ভ্যাট দিতে হবে। ওরা ৫০ হাজার টাকা বেতন দিতে পারে। মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট কেন দিবে না। এটা হতে পারে না’। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও সরকারি ভাষ্য হলো, ‘বাজেট পাসের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ​ই মূসকের হার সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়। বাজেট পাস হয় জুন মাসে। প্রায় তিন মাস পর এই মূসক নিয়ে কতিপয় ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে নেমেছেন’। প্রশ্ন হলো ভ্যাট কে প্রদান করবে তা নিয়ে যখন সরকারের অর্থমন্ত্রী বা এনবিআর একের পর এক বিপরীতমুখী বক্তব্য দিয়েছে তখন ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে কিভাবে বোঝা সম্ভব ছিল যে, এ ভ্যাট তাদেরকেই প্রদান করতে হবে। তাছাড়াও ভ্যাট আরোপের পরপরই ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দাবি আদায়ের জন্য যেহেতু তারা ভাঙচুর বা অবরোধ করেনি সেজন্য ক্ষমতাসীনরা সম্ভবতঃ প্রত্যাশা করেছিলো পুলিশকে দিয়ে হামলা বা ভয় দেখালে ‘ধনীর দুলালরা’ পালাবে। বুঝতে পারেনি যে, দলীয় সমর্থন ছাড়া ছাত্র-ছাত্রীরা এ ধরনের ধারাবাহিক আন্দোলনে সক্ষম হবে। প্রেসনোটের ভাষ্যে এটাও প্রশ্ন ওঠেছে ক্ষমতাসীনরা আদৌ শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয় কিনা? প্রেসনোটে বলা হয়, ‘অনেকেই অতি নির্দিষ্ট সামর্থ্যের মধ্যে ছেলেমেয়ের শিক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন খাতের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যয়বহুল।……যারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক খরচ করে শিক্ষা গ্রহণ করছেন তাঁরা অতিরিক্ত সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক দিতে চান না। এ জন্য তাঁরা ক্লাস ছেড়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে জনজীবন বিঘ্নিত করছেন এবং উন্নয়নের যাত্রার পথে বাধা সৃষ্টির সুযোগ করে দিচ্ছেন’। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বোচ্চ ২০% ছাত্র-ছাত্রী ধনী বা স্বচ্ছল পরিবার থেকে এসেছে। বাঁকিদের অনেকে কৃষক, দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি যোগাতে গিয়ে পেনশনের টাকা, ব্যাংকে জমানো সামান্য অর্থ, শেষ সম্বল ভিটা মাটি বিক্রয় এবং পরিবারের মাসিক খরচ বাঁচিয়ে, খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ছে। কোনো ধরনের সেশন জ্যাম ছাড়াই চার-পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শখে নয়, বরং সেশন জ্যাম ও অপরাজনীতি পছন্দ করেনা এমন অনেক পরিবারও কষ্ট করে হলেও তাদের সন্তানকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। ৭.৫০% হারে ভ্যাট দিতে হলে সরকারের মাত্র ৫০-৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও একজন ছাত্র-ছাত্রীর আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স শেষ করতে অতিরিক্ত ৫০ হাজার থেকে সোয়া লাখ টাকা ব্যয় করতে হতো। ফলে সার্বিকভাবে উচ্চ শিক্ষার ব্যয় বেড়ে অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ব্যাহত হতো বা ঝড়ে পড়তো।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র আগ্রাসী ভ্যাট সংগ্রহের খর্গ যে শিক্ষার ওপর তার সর্বশেষ উদাহরণ হলো, একদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি’র ওপর ৭.৫% হারে ভ্যাট প্রত্যাহার করছে, আর অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের প্রধান শিক্ষা উপকরণ কম্পিউটার ও কম্পিউটার পণ্যের ওপর ৪ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপ করেছে। এ হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বরুপ! উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বৃত্ত পরিচালনা ব্যয় এবং এমনকি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের টিউশন ফি’র ওপর করারোপ করেছে ক্ষমতাসীনরা। বিশ্বব্যাপী যখন আয়কর রাজস্ব বা প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে সর্বাধিক কর রাজস্ব সংগ্রহের দিকে আগাচ্ছে, তখন কি কারণে সরকার ব্যাপকভাবে ভ্যাটের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। আর কেন-ই বা ভ্যাট সংগ্রহে শিক্ষা বা শিক্ষা উপকরণকে পণ্য বানাচ্ছে তা পরিস্কার নয়। সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে, ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা’। অথচ বাস্তবে অবস্থান তার উল্টো। অথচ সব সময়ই সংবিধানের দোহাই দেয়া হয়।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা, আবাসন বা অন্যান্য খরচ বাবদ গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ টাকা ভর্তুকি পেলেও একই দেশের নাগরিক হয়েও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা তা পাচ্ছেনা, উল্টো করারোপের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার দ্বার রুদ্ধ করা হচ্ছে। রাষ্ট্র কর্তৃক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সব শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ প্রদানের কথা থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি’র ওপর ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদ (‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন’) লংঘন করছে। উল্লেখ্য, দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পড়ালেখা করছেন। এ প্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্র কর্তৃক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাটারোপ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে ৯ আগস্ট রুল জারি করে হাইকোর্ট।

ভ্যাট আইন, ২০১২ দ্বিতীয় তফসিল এর ধারা ২(গ)(চ) এ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পরিচালিত নয় এমন সামাজিক উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম কে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অথচ কোন কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি’র ওপর ভ্যাট আরোপ করা হলো? গত তিন মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি’র সাথে অতিরিক্ত সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস উঠলেও অর্থমন্ত্রী মনে করেন, ‘একজন শিক্ষার্থী গড়ে এক হাজার টাকা খরচ করে, সেখানে ৭.৫ ভাগ হারে এক হাজার টাকায় ৭৫ টাকা বড় কিছু নয়’। জনগণের করের টাকায় পরিচালিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত ৪০ বছরে এক টাকা ফি’ও বাড়াতে পারেনি সরকার। এমনকি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্যকালীন বিভিন্ন পেশাদার কোর্স (যেমন, এমবিএ, পাবলিক পলিসি এবং গভর্নেন্স, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কম্পিউটার বিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ে মাষ্টার্স) উচ্চ ফি’তে পরিচালনা করা হলেও ঐ ফি’র ওপর ভ্যাটারোপ হয়নি। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে খরচ বাদে উদ্বৃত্ত তহবিল থেকেও সরকার আয়কর পাচ্ছে।

ক্ষমতাসীন এক নেতা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ভ্যাটের বিরুদ্ধে নয়, বরং অতিরিক্ত টিউশন ফি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। প্রশ্ন হলো, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনক্রমে ফি নির্ধারণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ করার কথা প্র্রশ্ন হলো, যখন এসব উচ্চ ফি নির্ধারণ করা হয়, তখন ইউজিসি কোথায় ছিল? বেসরকারি শিক্ষার ওপর ভ্যাট আরোপ শুধু অযৌক্তিক নয় বরং তা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধকতা বটে।

শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য বা সেবা নয়। শিক্ষার মাধ্যমে কোথায় মূল্য সংযোজিত হয়, তা পরিস্কার করেনি এনবিআর। শিক্ষা তো পণ্য নয়। শিক্ষা কি শিক্ষার মূল্য বাড়ায়? তাহলে কার মূল্য সংযোজনের ওপর ভ্যাটারোপ করা হয়েছিলো? এজন্যই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট আইনের মাধ্যমে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এর মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত উদ্বৃত্ত পরিচালনা ব্যয় ¯œাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণা, বৃত্তি প্রদান এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যয়ে বাধ্য করা হয়। সেখানে ভ্যাটের মতো পরোক্ষ করারোপের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার দ্বার রুদ্ধ করার সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশে পরিস্থিতি ভিন্ন। উল্লেখ্য, রাষ্ট্র সমান খরচে সবার জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনেও ক্ষমতাসীনরাই দায়ী, কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালেয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ।

বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এর মতে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ শতাংশ উদ্বৃত্ত পরিচালনা ব্যয়ের ওপর ৭.৫ শতাংশ হারে ভ্যাটারোপ করে অধিক হারে অর্থাৎ ৩৭.৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ করারোপ করলে সরকারি অর্থায়ন সংক্রান্ত লাফার কার্ভ তত্ত্ব অনুযায়ী রাজস্ব আয় দীর্ঘমেয়াদে কমতো। আর সার্বিকভাবে এতে যে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে হাজার হাজার সন্তান বঞ্চিত হতো। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বেসরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়ের হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বাংলাদেশের ব্যক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। প্রতি বছর ৫ লাখ শিক্ষার্থী দেশের বাইরে শিক্ষা নিতে গেলে কত শত কোটি টাকা বিদেশে চলে যেত সে হিসাব কি ক্ষমতাসীনরা কখনো করেছে?

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে উচ্চ শিক্ষায় ভ্যাটারোপ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। এটা যে অসত্য এবং ভিত্তিহীন তার প্রমাণ হলো, সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করলে এনবিআর’র আয় হতো মাত্র ৫০-৬০ কোটি টাকার মতো, যা ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের মোট রাজস্ব আয়ের মাত্র ০.০৬%। অথচ এ প্রবন্ধ লেখকের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে কর ফাঁকি/আত্মসাতের পরিমাণ ২০,৯৮৩.৫ কোটি টাকা, যা ঐ বছরেই এনবিআর সংগৃহীত কর রাজস্বের প্রায় ৩৩.৮%। অথচ এনবিআর’র বার্ষিক প্রবিদেনে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২ কোটি টাকার ওপর সম্পদ থাকা মাত্র ৫,৩২৯ জন এনবিআরকে কর প্রদান করেছে। অথচ ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর প্রদান করেছে ৩৭,১৭৭ জনের প্রত্যেকের কমপক্ষে ১ কোটি টাকা এবং সর্বোচ্চ শত কোটি টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত আছে যার সর্বমোট পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা (বণিকবার্তা, ২০১৪)। অর্থাৎ উচ্চ বিত্তদের কর ফাকি মাত্র ১০% রোধ করতে পারলে শিক্ষা বা শিক্ষা উপকরণের ওপর করারোপের আদৌ প্রয়োজন নেই।

ক্ষমতাসীনসহ মন্ত্রী এবং এমপিরা কত টাকা কর দেন বা শুল্ক না দিয়ে কর মুক্ত গাড়ির সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রের কত টাকার কর ক্ষতি করেন – সেসব হিসাব করলে রাজস্ব হারানোর পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা হবে। শুধু তাই নয়, জনগণের করের টাকায় পরিচালিত সরকারি সোনালী সহ বিভিন্ন বিভিন্ন রাষ্ট্রয়াত্ত্ব ব্যাংক এবং বেসরকারি বেসিক সহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের মদদে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ সহ এক শ্রেনীর আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া ব্যবসায়ীরা যখন প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করলো তখন ক্ষমতাসীন অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘এগুলো সামান্য টাকা’। শেয়ার বাজার সহ বিভিন্নভাবে লুটপাটকারীরা দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করলেও তিনি প্রায় একই কথা বললেন। তাহলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কষ্টে উপার্জিত টাকায় সন্তানের টিউশন ফি’র ওপর ভ্যাটরোপ বোঝেন কিভাবে? এ চাপ কেন কর ফাঁকিবাজদের দেননা? যেসব ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দেয়ার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বৃত্ত পরিচালনা ব্যয় মিথ্যা খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করলে তা রোধ না করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ভ্যাট আরোপের একপেশে পদক্ষেপ যে অকার্যকর তাতো প্রমাণিত হয়েছে। আর ভ্যাটারোপ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তেলেসমাতি যে এক ধরনের ‘গোজামিল’ কর নীতি তা নির্ধিদ্ধায় বলা যায়। বাস্তবতা হলো, করারোপের প্রধান নীতি হলো, ‘No taxation without representation’, অর্থাৎ জনগণের প্রতিনিধিত্বহীন সরকার না থাকলে করারোপের আইনী বৈধতাও থাকেনা এবং এর ফলে কর ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক হতে বাধ্য।।

আমাদের বুধবার

এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই

প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G