শো-পিস তৈরী করে সাবলম্বী ফরিদুল
প্রতিক্ষণ ডটকম:
অভাব অনটনের কারণে মাধ্যমিকে পড়ার সুযোগ হয়নি তার। পেটের তাড়নায় একদিন দেশের উত্তর হতে দক্ষিনের জনপদে পা বাড়ান। জীবিকার খোঁজে নিরন্তর ছুটে চলা। এই মানুষটি শেষ পর্যন্ত থামেন দক্ষিন পশ্চিমের বিভাগীয় শহর খুলনায়। সেখানে এক স্থানীয় ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কারখানায় ৩/৪ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পাড়ি দেন চট্টগ্রামে। দুই বছর পর আবার নিয়ে ফিরে আসেন খুলনায়।
নগরীর গগণ বাবু রোডের সৃজনী কারুকর্মে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু হয় তার। ২০০৪ সাল। নিজ জেলা নাটোরে ফিরে আসেন। গুরুদাসপুরের নাজিরপুরে স্থানীয় বাজারে ঘরভাড়া নিয়ে নিজেই গড়ে তোলেন তার জীবিকার কারখানা।
টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে শো-পিস তৈরি করার মত অবস্থা তার ছিল না। আগ্রহ আর শৈল্পিক নির্মাণ শৈলি দেখে গ্রাম্য চিকিৎসক আব্দুর রহিম ৩০ হাজার টাকা ধার দিয়ে সহযোগিতা করেন। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
এখন তার কারখানায় ৮ জন দক্ষ কারিগর রয়েছে। জীবন সংগ্রামী যে মানুষটির কর্মের কথা এতক্ষণ বলছিলাম নাম তার ফরিদুল।
তার হাতে তৈরি কাঠের শো-পিস এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে ছয়টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফরিদুল তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন আর নাছীর ক্র্যাফট। এখানে তিনি কাঠ দিয়ে তৈরি করছেন তাজমহল, হারিকেন, চার্জার হারিকেন, টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি, কলমদানি, জুয়েলারি বক্স, টেবিল ঘড়ি, দেয়াল ঘড়ি, পাউডার কেস, মোমদানি, সিঁদুরদানি ও রিং কেইসসহ হরেক রকম সব পণ্য।
নিখুঁত হাতে কাঠ খোদাই করে তৈরি এসব শো-পিস অত্যন্ত আকর্ষনীয়। পাঁচ বছর ধরে শো-পিস তৈরি করে চলেছেন ফরিদুল। পুঁজি সংকটের মধ্যেও তিনি থেমে যাননি তিনি। শো-পিচ তৈরীতে মেহগণি ও খেইয়া বাবলা (স্থানীয় ভাবে জিলাপির গাছ হিসেবে পরিচিত)। কাঠ ব্যবহার করছেন। কাঠ কেটে ও ঘঁষে মসৃণ করে তৈরি করছেন চোখ জুড়ানো মন ভরানো ঘর সাজানোর এ শো-পিস পণ্য।
ফরিদুলের তৈরি পণ্য ঢাকার চন্দ্রিমা কটেজ, বিভিন্ন সুপারমল, মিরপুর রোডের আইডিয়াল কার্ড, রাজশাহী নিউ মার্কেটের কুঠিঘর, উত্তরাঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্র রংপুরের ভিন্নজগৎ, দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী, নওগাঁর পাহাড়পুরসহ বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দামে বিক্রি করছেন।
এছাড়াও কারখানা থেকেই স্থানীয় হকাররা এ সকল পন্য কিনে নিয়ে গ্রাম গঞ্জে কিংবা হাটে বাজারে এবং গ্রামের বিভিন্ন সমাবেশ, ইসলামী জলসা, স্কুল-কলেজের উৎসবসহ নানা অনুষ্ঠানে বিক্রি করে।
টোরাস লিমিটেড এর মাধ্যমে ফরিদুল এখন ইতালি, জ্যামাইকা, জার্মানি, আরব আমিরাত, মরিসাস, দুবাই, আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে হাতের আংটি, সুপের বাটি, চুড়ি, হাতের বালা, মোমদানি, তাজমহল, চার্জার হারিকেন, ডিস আয়না, টেবিল আয়না, ডিজিটাল আয়না, পকেট আয়না ও রিংসহ হরেক রকম পণ্য পাঠান ।
ফরিদুলের শো-পিস দেশের অন্যান্য কারখানার চেয়ে অনেক ভাল ও নিখুঁত। দামেও অপেক্ষাকৃত কম। তাই বিক্রিও অনেক বেশী।
টোরাস লিমিটেডের মালিক মাকসুদ খান জানান, দেশের অনেক কারখানার তৈরি শো-পিস বিদেশে পাঠালেও ফরিদুলের কারখানার স্যুপের বাটি, ডিজিটাল হারিকেন,তাজমহল.মোমদানি ও মেয়েদের ফ্যাশনের জন্য হাতের চুড়ি, বালার চাহিদা একটু বেশীই।
ফরিদুলের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন মাসে দুই লাখ টাকার পণ্য তৈরি করেন তিনি। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পুঁজি কম থাকায় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে এ ধরনের কারখানা নেই। সরকার যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে কাঠের তৈরি এসব শো-পিসে বৈদেশিক আয় বাড়ানো সম্ভব। একই সঙ্গে উত্তরাঞ্চলে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলে বেকার সমস্যার সমাধান হতে পারে এ পেশা থেকে।
প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ