সারাদেশে ছুটির আমেজ, কাজের চাপে সাংবাদিকরা
নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশে একটি ছুটি ছুটি আমেজ ভর করেছে৷ মোটামুটি সবাই বাড়ি গেছেন ভোট দিতে, সময় কাটছে পরিবারের সঙ্গে৷ এই মুহূর্তে ভীষণ চাপে টানা কাজ করে যাচ্ছেন কয়েকটি পেশার মানুষ৷ সাংবাদিকরা তার মধ্যে অন্যতম৷
নিউজ ২৪-এর জয়েন্ট নিউজ এডিটর আঙ্গুর নাহার মন্টি গতকাল রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন৷ ১২দিন পর নিজের একমাত্র কন্যা সন্তানের সঙ্গে দেখা হওয়ার ফুরসত মিলেছে তাঁর৷ সকালে বের হয়ে গভীর রাতে ফেরার ফলে বাধ্য হয়ে মেয়েকে ফুপুর বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন৷ গতকাল একটু সময় বের করে মেয়েকে দেখে এলেন৷ লিখলেন, এ বছর আর মেয়ে বাড়ি ফিরছে না৷ মোটামুটি এটাই দৃশ্য সাংবাদিকদের৷
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি চাপ নিতে হয় সাংবাদিকদের৷ প্রতিটি গণমাধ্যমেরই চেষ্টা থাকে সবার আগে সঠিক খবরটা পৌঁছে দেওয়ার৷ আর এই প্রতিযোগিতার অন্যতম সহযোগী বাড়তি চাপ৷
দৈনিক সমকাল-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি জানালেন, গত ২০ তারিখ থেকে সব ধরনের ছুটি বতিল করা হয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠানে৷ জনগণ যেমন ভোটকে উৎসব মনে করছেন, সাংবাদিকরাও আনন্দের সঙ্গেই বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন৷ কেউই চাপ মনে করছেন না, আমাদের প্রায় সবারই এই সময় পরিবার-বিচ্ছিন্ন কিন্তু সহকর্মীদের সঙ্গে কর্মময় সময় কাটছে৷
তিনি আরো জানান, চেষ্টা থাকবে সর্বশেষ আপডেটসহ শেষ খবরটা পৌঁছে দেওয়ার৷ তাই ছয় থেকে সাতটি সংস্করণ প্রকাশের পরিকল্পনা আছে৷ সুতরাং শুধু সাংবাদিক নয়, নির্বাচনের আগে-পরে মিলিয়ে ৫-৬দিন প্রুফ রিডার, গ্রাফিক ডিজাইনার ও প্রেসের লোকেদেরও সমান চাপ থাকবে৷
কালের কণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদক আজিজুল পারভেজ জানালেন, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো তাঁর প্রতিষ্ঠানও বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ গত ১৫ দিন যাবত সব ধরনের ছুটি ক্যান্সেল করা হয়েছে৷ ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে অনেক প্রতিবেদককে৷ নিউজ রুমও বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে৷
তবে একটু ভিন্ন তথ্য জানালেন গাজী টিভি ও সারাবাংলা’র প্রধান সম্পাদক ইশতিয়াক রেজা৷ তিনি জানালেন, স্বাভাবিক রুটিনই চলছে৷ কারণ, বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলো সবসময় বাড়তি চাপ নিয়ে কাজ করে, তাই এটি আলাদা করে বাড়তি চাপ নয়৷
অনলাইন ও টেলিভিশন বরাবরই বাড়তি চাপ নিয়ে কাজ করে, তাই ভোটের মতো বড় ইভেন্টে বাড়তি চাপ বলে কিছু থাকে না৷ তবু থাকে অনেক প্রস্তুতি৷
ভোটের দিনের কাজের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলা ট্রিবিউনের জয়েন্ট নিউজ এডিটর তানজিমুল নয়ন জানালেন, ‘‘স্বাভাবিকভাবেই কাজের চাপ বেড়েছে৷ সবাই নিজ নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত সময় কাজ করবে আগামীকাল৷ ফিচার, স্পোর্টসসহ বিভিন্ন সেকশনের কর্মীরা আগামীকাল নিউজ ডেস্কের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন৷ ২৯, ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে৷ ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ভোটের দিন দুপুর থেকে, অর্থাৎ আগামীকাল দুপুর থেকে ফল ঘোষণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে৷”
টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন সবাই প্রস্তুত নির্বাচনের সংবাদ যথাযথভাবে প্রচার করতে৷ নির্বাচন কমিশনে যেসব সাংবাদিক ভোটের ফল সংগ্রহের কাজ করবেন, তাঁরাও বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন৷ নির্বাচন কমিশনের সামনে তৈরি হয়েছে সাংবাদিক বুথ৷ সেখানে নিজের প্রতিষ্ঠানের ব্যানার টাঙিয়ে বসার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন সাংবাদিকরা, যাতে করে ভোটের ফল প্রকাশে কোনো বিলম্ব ও সংকট না হয়৷
বেশ কিছুদিন স্বজনদের থেকে দূরে থাকতে হবে, তবে সবাই বেশ মেনেই নিয়েছেন৷ ভোটের দিন আবশ্যিকভাবে অফিস করতে হবে সারাবাংলা’র সিনিয়র নিউজ রুম এডিটর শেখ সিরাজুম মুনিরা নীরাকে৷ এদিকে পরিবারের সদস্যরা ভোট দিতে গিয়েছেন চট্টগ্রামে৷ তাই নিজের পৌনে দুই বছরের সন্তানকে ছেড়ে ঢাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে এই সাংবাদিককে৷
এক ফটো সাংবাদিক খুব আক্ষেপের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘কতদিন ঈদের নামাজ পড়ি না, শুধু নামাজের ছবি তুলি৷” নিজের ভোটকেন্দ্রেও যেতে পারেন না এইসব কর্মী৷ আলাদা করে আগাম ভোট বা পোস্টাল ভোটের সুবিধাটা অনেক হ্যাপার বলে সেই ঝামেলায় যান না বেশিরভাগ ব্যক্তি৷
এসব ছোট ছোট বিচ্ছেদ, সংসার পরিজনদের থেকে অনেক দূরে থেকে পেশাগত দায়িত্বের মধ্য দিয়ে তৈরি হয় যেকোনো উৎসব ও আয়োজনের সংবাদ৷
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
প্রতিক্ষণ/এডি/রন