সেই জজ মিয়া এখন ট্যাক্সি ড্রাইভার !!
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জজ মিয়া আলোচিত ব্যক্তি। চাঞ্চল্যকর এ মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হয়। তাঁর কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করা হয়। তাঁকে করা হয় চরম নির্যাতন।
জজ মিয়া বলেন, ‘আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছি। আমার জীবন যারা নষ্ট করেছে, তাদের যেন ফাঁসি হয় এবং ২১ আগস্ট ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরও যেন বিচার হয়।’
মিথ্যা জবানবন্দি দেওয়ার জন্য জজ মিয়ার পরিবারকে প্রতি মাসে টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়। কিন্তু পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে আসল কাহিনী।সেই জজ মিয়া বলেন, ‘এখন আর আমার খোঁজ কেউ নেয় না। আমাকে পুনর্বাসনও করেননি সরকার। এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করলেও মেলেনি সাড়া।’
‘খুব আর্থিক অনটনে দিন কাটছে আমার। ট্যাক্সি চালিয়ে সংসার চালাই। কিন্তু এখনো নির্যাতনের কারণে ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারি না। শরীর জ্বালাপোড়া করে।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত জনসভা ছিল। দলীয় কার্যালয়ের সমানে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ গড়ে জনসভার কাজ চলছিল। জনসভার শেষ দিকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার সময় সেখানে মুহুর্মুহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দলের অনেক নেতাকর্মী। মঞ্চে মানববর্ম তৈরি করে দলীয় প্রধানকে হামলার হাত থেকে প্রাণে বাঁচান দলের নেতারা।
গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী মহিলা লীগের সভানেত্রী আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগকর্মী রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগমসহ ২৪ নেতাকর্মী মারা যান।
এ ছাড়া আহত হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, নাসিমা ফেরদৌস, রুমা ইসলামসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
এই গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মতিঝিল থানায় দুটি মামলা করা হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর গ্রেপ্তারের ঘটনার বিবরণ দিয়ে জজ মিয়া জানান, তিনি তখন ঢাকায় ব্যবসা করতেন। একদিন বাড়িতে মাকে দেখার জন্য যান। তখন কবির দারোগা তাঁকে বাসা থেকে নিয়ে আসেন।
‘আমি দারোগাকে বলি, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, তাহলে আমাকে কেন নিয়ে যাচ্ছেন? দারোগা বলেন, তোমার নামে এখানে কোনো মামলা নেই। তবে ঢাকা থেকে নির্দেশ রয়েছে তোমাকে গ্রেপ্তার করার। তারা বলতে পারবে, আসল ঘটনা।’
জজ মিয়া বলেন, ‘এর পর ঢাকা থেকে লোকজন এসে থানা থেকে সবাইকে বের করে দেয়। পরে আমার চোখ বাঁধে। আর গজারি কাঠ দিয়ে আমার পায়ের তালু ও হাতে মারে। আর আমাকে বলে, তুই স্বীকার করবি, তুই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত।’
সূত্র: এনটিভি