হজে গমনকারীদের করনীয় বিষয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্ব মুসলিমের মহা-সম্মেলন হচ্ছে হজ। আল্লাহ যাকে মনোনীত করেন তিনিই কেবল হজ সম্পাদন করতে পারেন। হজের জন্য চাই আল্লাহর অত্যাধিক প্রেম। বাংলাদেশ থেকে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে হজ ফ্লাইট চালুর কথা রয়েছে। আল্লাহর প্রেমিকরা ধবধবে সাদা ইহরামের পোশাকে এবং লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত করে তুলবে পবত্রি কাবা চত্তর। চুমু খাবে হাজরে আসওয়াদে, সোনালী জড়ির কালো গিলাফ জড়িয়ে চোখের পানিতে বুক ভাসাবে আল্লাহর দরবার মুক্তিকামী মুসলিম জনতা। আর যারা যাবে মদিনায়- তাঁরা প্রিয় নবীর রওজায়, সবুজ গম্বুজের মায়াবি ছায়ায় নিজেকে বিলিয়ে দিবে সালত ও সালামে।
১. মানুষ হজ করবে কেন?
আল্লাহ বলেন- ইন্না আউয়্যালা বাইতিউঁ উদিয়া লিন্নাসি লাল্লাজি বিবাক্কাতা মোবারাকাউঁ ওয়াহুদাল্লিল আলামিন। ফিহি আয়াতুম বাইয়্যিনাতুম মাকামু ইবরাহিম। ওয়া মান দাখালাহু কানা আমিনান…… আনিল আ`লামিন। অর্থাৎ নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম গৃহ যা মানবজাতির কল্যাণের জন্য নির্মিত হয়েছিল তা মক্কায় অবস্থিত। এ ঘর বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়েত এবং বরকতময়। তার মধ্যে প্রকাশ্য নির্দশনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইবরাহিম উক্ত নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আর যে ওর মধ্যে প্রবেশ করেছে সে শান্তি প্রাপ্ত হয়। সামর্থ্যবানদের জন্য এ ঘর প্রদক্ষিণ করা অবশ্য কর্তব্য। এবং কেউ যদি অস্বীকার করে তবে নিশ্চয় আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসী হতে প্রত্যাশামুক্ত। (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৬-৯৭)।
খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজের প্রতি উম্মতকে আগ্রহী করে তুলতে ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য হজব্রত পালন করল এবং কোনো অশ্লীল কাজ করল না, সীমালংঘন করল না, সে সদ্যজাত শিশুর মতোই নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরল। (মিশকাত)
২. হজের নিয়ত-
হজের রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে সর্ব প্রথম নিয়ত নিখুঁত করুন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল। তাইতো নিয়তের পর জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তির জন্য আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা করুন। আল্লাহ যেন হজকে কবুল করে হজ পরবর্তী জীবনে অটল অবিচল থাকার তাওফিক দান করেন।
৩. তৈরি করে নিন নিজেকে-
মানসিক ও শারিরীক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। যাতে মনের সঙ্গে শরীরের সব অঙ্গ-প্রতঙ্গকে বলুন- হে মন আল্লাহর যাবতীয় বিধিবিধান পালনে প্রস্তুতি গ্রহণ কর। কারণ মনের একান্ত স্থিরতাই ইবাদাত কবুলের জন্য সহায়ক।
৪. ইহরাম
হজ ও ওমরা যাই করুন, প্রথম অনুসঙ্গই হচ্ছে ইহরাম। পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকেই হোক না কেন? আপনার যাত্রা কোথায়? মক্কায় না মদিনায়। যদি মক্কায় হয় তবে বিমানের ওঠার আগেই ইহরামের নিয়্যতে ইহরামের কাপড়ে নিজেকে জড়িয়ে নিন। বিনা ইহরামে মিকাত (ইহরামের স্থান) ত্যাগ করলে দম বা কাফফার দিতে হবে।
৫. ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ-
ইহরাম গ্রহণের পর সাংসারিক কাজকর্ম তথা দুনিয়াদারি নিষেধ, যেমন- সহবাস করা যাবে না, পুরুষদের জন্য সেলাই করা পোশাক বৈধ নয়, কথা ও কাজে সংযত থাকা, নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না, সুগন্ধি লাগানো যাবে না, শিকার করা যাবে না। তবে ক্ষতিকারক সব প্রাণী মারা যাবে, ক্ষতি করে না এমন কোনো প্রাণী মারা যাবে না।
৬. মক্কা বা মদিনায় যখন পৌছবেন-
ওমরাহ নিয়্যতে ইহরাম বাধা অবস্থায় মক্কায় পৌছলে ওমরাহ পালন করে নিন। মালপত্র রেখে একটু বিশ্রাম করুন, নামাজের ওয়াক্ত হলে নামাজ আদায় করে নিন। আর মদিনায় গেলে যেমন ইহরামের প্রয়োজন নাই তেমনি। রওজা জিয়ারাত, বিশ্রাম ও সময়মত নামাজ আদায় করুন।
৭.ওমরাহ কি?
হিল (কাবা শরিফের সীমানার বাইরে মিকাতের ভেতরের স্থান) থেকে অথবা মিকাত থেকে (বাংলাদেশী যারা মক্কায় যাবে তারা বাংলাদেশ থেকে) ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করা, সাফা-মারওয়া সায়ী করা এবং মাথার চুল ফেলে দেয়া বা ছোট করাকে ওমরাহ বলে।
৮. ওমরাহ করার নিয়ম
ক. ইহরাম বাধা।
খ. বাইতুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করা।
গ. মাকামে ইবরাহিমে দু’রাকাআত নামাজ আদায় করা।
ঘ. জমজমের পানি পান করা।
ঙ. সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো তথা সায়ী করা।
চ. মাথা মুণ্ডানো অথবা চুল ছোট করার মাধ্যমে ওমরার ইহরাম থেকে বাহির হওয়া। এসব কাজ ধারাবাহিকভাবে করা। ওমরা পালনকোলে ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় হলে যতটুকু হয়েছে ওই সময় নামাজ পড়ে আবার বাকিটুকু শেষ করা।
সুতরাং হজের মিশনের প্রথমে হাজি মক্কা বা মদিনায় পৌছে নিজেকে এবাবে তৈরি করে নিবেন। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে সেপ্টেম্বরের ২২ বা ২৩ তারিখ পর্যন্ত নিজেকে হজের কার্যগুলো সঠিকভাবে সমাধানে ধীরে ধীরে প্রস্তত করবেন। আল্লাহ আমাদের মনের নেক চাওয়া তথা কুরবানিকে কবুল করুন।
প্রতিক্ষন/এডি/এমএস