“হলুদ সাংবাদিকতা” শব্দটি কীভাবে এলো?

প্রকাশঃ জুলাই ১৭, ২০১৬ সময়ঃ ১১:২০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫৬ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

PulitzerHearstWarYellowKids

“হলুদ সাংবাদিকতা” বা “ইয়েলো জার্নালিজম” শব্দটি গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ পাঠক সবার কাছেই খুব পরিচিত। হলুদ সাংবাদিকতা বলতে মূলত বোঝায় পত্রিকার কাটতি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বা অন্য কোন বিশেষ কারণে ভিত্তিহীন, রোমাঞ্চকর ও উত্তেজক সংবাদ পরিবেশন করে চমক সৃষ্টি করা।

কিন্তু কখনো কি আপনাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, হলুদ সাংবাদিকতার নাম হলুদ সাংবাদিকতা কেন? কেন কালো, লাল বা নীল সাংবাদিকতা নয়? হলুদ সাংবাদিকতা নামটি কিন্তু এমনি এমনি আসেনি, এর পেছনে আছে একটি মজার গল্প।

হলুদ সাংবাদিকতা বা ইয়েলো জার্নালিজম প্রত্যয়টি প্রথম ব্যবহার করা হয় উনিশ শতকের শেষের দিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক জার্নালের সম্পাদক উইলিয়াম র‍্যান্ডলফ হার্স্ট এবং নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের সম্পাদক জোসেফ পুলিৎজারের মধ্যকার বিখ্যাত “সংবাদপত্র যুদ্ধের” সময়।

এই দুটো পত্রিকা সেনসেশনাল স্টোরি এবং অনেক বেশি ড্রয়িং ও কার্টুন ব্যবহারের মাধ্যমে সংবাদপত্রের বিষয়বস্তু বদলে দিয়েছিল। যেহেতু অনেক বেশি কার্টুন প্রকাশিত হচ্ছিল তখন, পুলিৎজার ১৮৯৬ সালে নিজের একটি কার্টুন প্রকাশ করতে শুরু করেন যার নাম ছিল “ইয়েলো কিড”। কার্টুনটি আর. এফ. আউটকাল্টের সৃষ্টি ছিল এবং এটি হার্স্ট আর পুলিৎজারের শত্রুতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত হয়। হার্স্ট পরবর্তীতে আউটকাল্টকে “ভয়ংকর বেশি পরিমাণ” বেতন অফার করেন এবং তাঁকে ও ইয়েলো কিডকে নিজের পত্রিকার জন্য কিনে নেন। পুলিৎজার এরপর ইয়েলো কিডের সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্য ঠিক এর মতোই একটি কার্টুন প্রকাশ করতে শুরু করে।

এই পত্রিকা দুটোর মধ্যে অতিরিক্ত প্রতিযোগিতার ফলে তারা মেলোড্রামাটিক সংবাদ প্রকাশ করতে শুরু করে এবং সংবাদগুলো এমনভাবে পরিবর্তন করে দিতে থাকে যা পত্রিকার বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে। তারা মনোরঞ্জক ও সংবেদনশীল সংবাদ দিয়ে পত্রিকা সাজাতো যাতে হকাররা রাস্তায় এসব সংবাদ দেখিয়ে পাঠক আকৃষ্ট করতে পারে।

এই পত্রিকা দুটো নিজেদের সংবাদকাহিনীগুলোকে উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলতে এবং প্রতিপক্ষের সংবাদকাহিনীগুলোকে হেয় করতে “ইয়েলো কিড” এর ব্যবহার করতো। এছাড়া এই বিখ্যাত কার্টুনটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনমত প্রভাবিত করার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হত। মোদ্দা কথা হলো, সেই সময়কার সংবাদপত্রগুলো বস্তুনিষ্ঠতা নামক শব্দটার ধারকাছ দিয়েও যেতো না।

আর হলুদ সাংবাদিকতা শব্দটির উৎপত্তি পুলিৎজার ও হার্স্টের মধ্যকার সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে, যে প্রতিযোগিতার কারণে সত্যি, মিথ্যার তোয়াক্কা না করে নিউ ইয়র্ক জার্নাল ও নিউ ইয়র্ক টাইমস কেবল উত্তেজক, অতিরঞ্জিত সংবাদই প্রকাশ করতো। আর এই উত্তেজক, অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশে “ইয়েলো কিড” নামক কার্টুনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো বলে পরবর্তীতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন, রোমাঞ্চকর, উত্তেজক সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকে “ইয়েলো কিড” এর ইয়েলো ধার নিয়ে “ইয়েলো জার্নালিজম” বা হলুদ সাংবাদিকতা বলে ডাকা শুরু হয়।

উল্লেখ্য, সাংবাদিকতার সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পুরুস্কার পুলিৎজার পুরুস্কার হলুদ সাংবাদিকতার সূচনাতে অবদান রাখা জোসেফ পুলিৎজারের নামেই দেওয়া হয়!

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G