হাতিদের জন্য সীমান্তে করিডোর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
একটা সময় ছিল যখন দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের হাতিরা ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভূটানে অবাধে চলাচল করতো। কিন্তু হাতিদের এ অবাধ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পরে হাতিদের এ অবাধ চলাচলে বাঁধা পড়ে। নেপাল-ভূটানে এ যাতায়াত অব্যাহত থাকলেও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত।
পাহাড়, জঙ্গল পেরিয়ে সুযোগ্য ‘পাত্র’ বা ‘পাত্রী’র খোঁজে ত্রিপুরা অঞ্চলের হাতিদের দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে যাতায়াত। কিন্তু সীমান্তের বেড়া এখন সে-পথে কাঁটা হাতিদের জন্য। যার কারণে বুলেটের বিপদতো রয়েছেই। সেই সঙ্গে ঘিরে ধরেছে সুস্থ বংশধারা বজায় রাখার সমস্যা।
ত্রিপুরার বনকর্তাদের আশঙ্কা, ভিন্দেশে যেতে না-পেরে নিজের পরিবারেই প্রজনন ঘটাচ্ছে হাতিরা। একই গোত্রের সেই মিলনে জিনগত অসুখে আক্রান্ত হতে পারে তারা!
মানুষের তৈরি সীমান্ত পেরোলেই গুলিতে মৃত্যু। আবার না-পেরোলে বিপদ প্রকৃতির হাতে। হাতিরা পড়েছে আতান্তরে। হাতিরা পড়েছে দ্বিধায়। পারাপারের চিরাচরিত পথ আটকে যাওয়ায় নতুন এলাকা খুঁজে নিতে হচ্ছে তাদের। কখনও কখনও বেড়া ভেঙেই হাজির হতে হচ্ছে বিদেশে।
হাতিদের এমন সমস্যার দাওয়াই খুঁজতেই কলকাতায় বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের বনকর্তারা। দু’দিনের বৈঠকে তাঁদের প্রস্তাব: সমন্বয় গড়ে হাতিদের পারাপারের ‘করিডর’ বা পথ বজায় রাখুক দু’দেশ। চোরাশিকারিদের দাপট কমাতে সক্রিয় হোক বন্যপ্রাণ শাখার অপরাধ দমন শাখাও।
বাংলাদেশে যাতায়াত করা ত্রিপুরার হাতিদের কাছে কতটা জরুরি, বৈঠকের পরে তা ব্যাখ্যা করলেন ত্রিপুরার বনকর্তা প্রসেনজিৎ বিশ্বাস। তিনি জানান, বাংলাদেশে গিয়ে ত্রিপুরার হাতিরা সে-দেশের হাতিদের সঙ্গে মিলিত হয়। তার ফলে তাদের জিনগত বৈচিত্র বজায় থাকে। বাংলাদেশে যেতে না-পারলে তারা নিজেদের পরিবারেই প্রজনন ঘটাতে থাকবে। তার ফলে দুরারোগ্য জিনগত অসুখে আক্রান্ত হতে পারে ওরা।
প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের এই যুক্তি মেনে নিয়েছেন অনেক বনকর্তা। যদিও এ রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল অতনু রাহা জানান, উত্তরবঙ্গের হাতিরা অন্য রাজ্যেও ঘুরে বেড়ায়। যায় নেপাল-ভুটানেও। তাই নিজেদের পরিবারে প্রজনন বা জিনগত বৈচিত্র হারানোর ভয় তাদের ততটা নেই।
হাতিদের প্রজননে যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, সেই ব্যাপারে বনকর্তারা একমত হয়েছেন। হাতিদের করিডরে নিয়মিত নজরদারির কথাও বলা হয়েছে বৈঠকে। দাঁতের লোভে চোরাশিকারিরা হাতি মারে। হাতিদের পথে যে-সব জনবসতি রয়েছে, বিপদ ঘটতে পারে সেখানেও। বনকর্তাদের সিদ্ধান্ত, দু’দেশেই সমন্বয় দল থাকবে। হাতিদের পারাপারের সব তথ্য আদানপ্রদান করা হবে। তার ফলে হাতিদের পথ নির্বিঘ্ন করা সম্ভব হবে।
ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে বন্যপ্রাণীর চোরাকারবার দিন দিন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। তাই বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধ কমানোর ক্ষেত্রেও সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে চোরাকারবারিরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেলেও তাদের ধরা যাবে বলে দাবি বন দফতরের কর্মকর্তাদের। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের কর্তা এবং বাংলাদেশের বনকর্তারা খসড়া প্রস্তাব পাঠাবেন নিজেদের কূটনীতিবিদদের কাছে। তার পরেই চুক্তি হবে।
বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের সদস্য, ডেপুটি চিফ কনজারভেটর মহম্মদ আকবর হোসেন বলেছেন, হাতি-সমস্যা মেটাতে চাই আমরাও।
প্রতিক্ষণ/এডি/তাফ