২৬ বছর পর শহীদ মিনারে এরশাদ

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৪৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডট কম

gKnZuEAদীর্ঘ ২৬ বছর পর শহীদ মিনারে যেতে পেরে আবেগ আপ্লুত হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। আজ রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন।পাশাপাশি নিজের লেখা ‘একুশ আমার রক্ত গোলাপ’ শিরোনামে একটি স্বরচিত কবিতাও আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন তিনি।

এরশাদ বলেন, ‘আমি আবেগে আপ্লুত। প্রশ্ন করতে পারো কেন আবেগ? ছোট শহীদ মিনার ছিল। ২৮ বছর আগে আমি শহীদ মিনারের পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছি। সেই শহীদ মিনারে ২৬ বছর পর প্রথম প্রহরে ফুলের মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এর চেয়ে বড় কী হতে পারে?’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে এরশাদ বলেন, ‘ইতিহাস বড় নির্মম। কাউকে ক্ষমা করেনি। ২৬ বছর যারা আমাকে যেতে দেয়নি তারাও আজ যেতে পারেনি। আমার সঙ্গে যা যা করেছে, তা তা তাদের সঙ্গে হয়েছে। আল্লার মাইর।’

রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এরশাদ এভাবেই ভাষাশহীদদের বিষয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সভায় ‘একুশ আমার রক্ত গোলাপ’ শিরোনামে এরশাদ নিজের লেখা একটি কবিতাও আবৃত্তি করে শোনান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ২৬ বছর পর এবারই প্রথম অমর একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১০ মিনিটে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান এরশাদ। অন্যদিকে এ বছর শহীদ মিনারে যাননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের একাধিক ছাত্রনেতা জানান, সামরিক শাসন জারি থাকা অবস্থায় নিরাপত্তা বাহিনী পরিবেষ্টিত হয়ে দু-একবার এরশাদ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু নিজে দল গঠন করে শহীদ মিনারে গেলে ছাত্ররা এরশাদকে প্রতিরোধ করেন এবং দলের একজন নেতা লাঞ্ছিত হন। এরপর আর শহীদ মিনারে যাননি তিনি। শহীদ মিনার এলাকায় এরশাদের প্রবেশ ঠেকাতে তখন ছাত্রসংগঠনগুলো ছিল এককাট্টা।

গতকালের অনুষ্ঠানে এরশাদের বক্তব্যের আগে একাধিক নেতা তাঁদের বক্তব্যে অভিযোগ করেন, শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে দলের দুজন সাংসদ এরশাদের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করেছেন। এ প্রসঙ্গটি সরাসরি উল্লেখ না করলেও বক্তব্যের শুরুতে এরশাদ বলেন, ‘আমরা একটি পরিবার। উদ্দেশ্য এক, লক্ষ্য এক। সে লক্ষ্য হলো দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া। দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা।’

এরশাদ দাবি করেন, তাঁর শাসনামলে তিনিই সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সংসদে আইন করেছিলেন। সরকারি নথিতে ইংরেজি লেখায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গৌরবও এরশাদ তাঁর নিজের ও জাতীয় পার্টির বলে দাবি করেন।

সাবেক এই স্বৈরশাসক দাবি করেন, তিনি শহীদ আসাদ বা ডা. মিলনকে হত্যা করেননি। তিনি মিলন হত্যার বিচারও দাবি করেন।
চলমান সহিংস রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এরশাদ বলেন, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। তারা কথা দিয়েছিল সাত দিনে সব স্বাভাবিক হবে। তা হয়নি। কবে ঠিক হবে তা তিনি জানতে চান। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করেন’।
এরশাদ আরও বলেন, চলমান সমস্যার সমাধান করতে না পারলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। মানুষ বলছে, জাতীয় পার্টি ছাড়া শান্তি ফেরানোর উপায় নেই।

জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এম এ হান্নান, সৈয়দ আবু হোসেন, এস এম ফয়সাল চিশতী প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/রোজি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G