বিপ্লব পার্থ, চট্টগ্রাম:
রক্তঝরা মার্চ মাসের আজ ষষ্ঠ দিন। এ দিন দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেডিও পাকিস্তানের এক অনুষ্ঠানে ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণ পূর্ণ ছিল বীর বাঙালিকে উদ্দেশ্য করে হুমকি ও ধমক। ছিল পাক সামরিক বাহিনী দিয়ে বাঙালিকে শায়েস্তা করার হুমকি। ভাষণে তিনি ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন আহবানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
এ ঘোষণার পর ৬ মার্চ আগাম যুদ্ধ প্রস্তুতির বৈঠক হয়েছিল। সন্ধ্যায় ক্যাপ্টেন রফিক (রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম) চট্টগ্রামের হালিশহরে তাঁর অফিসে কয়েকজন আস্থাভাজন বাঙালি জেসিও এবং এনসিওকে নিয়ে গোপন বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের যুদ্ধ প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নিতে হবে সেসব বিষয় তুলে ধরেন।
এ প্রসঙ্গে তাঁর লেখা ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ গ্রন্থে লিখেছেন: ‘বৈঠকে আমার লোকদের বললাম, পাকিস্তানিদের আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত হোন। ইপিআর-এর অবাঙালি সৈনিকদের তালিকা তৈরি করুন। তালিকায় অন্যান্য বিবরণীর সাথে অবাঙালি সৈন্যদের কর্মস্থল ও বাসস্থানের ঠিকানাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।’
“বাঙালি সৈন্যদের দায়িত্ব দিতে হবে অবাঙালি সৈন্যদের সবাইকে এমনভাবে সব সময়ে চোখে রাখতে; যেন সাংকেতিক বার্তায় আমার নির্দেশ পাওয়া মাত্র তারা অবাঙালি সৈন্যদের কালবিলম্ব না করে পরাজিত ও বন্দি করে ফেলতে পারে, এবং যেখানেই বলা হয় সেখানে যেন পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে।”
ঐ বৈঠকে তিনি আরো কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এগুলো হচ্ছে:-
(১) যে কোনো ঘটনার জন্য সতর্ক ও প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। প্রয়োজনবোধে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। পাকিস্তানিদের আকস্মিক আক্রমণ প্রতিহত করে নিজেদের জীবন রক্ষার প্রস্তুতি নিলেই চলবে না, সে আক্রমণ থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষার প্রস্তুতিও আমাদের থাকতে হবে।
(২) ইপিআরের অস্ত্রাগার ও বেতারকেন্দ্রগুলোর ওপর কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
(৩) সব যানবাহন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
(৪) সরাসরি আমার নিয়ন্ত্রণাধীন ফিল্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (গোয়েন্দা ইউনিট) -কে পোর্ট, বিমানবন্দর ও নেভাল বেইজ এলাকায় সকল কার্যকলাপের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার দায়িত্ব দেওয়া হল।
(৫) ঢাকার এবং সম্ভব হলে অন্যান্য ইপিআর সেক্টরের সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
একাত্তরের এই দিনে সংগ্রামী বাংলা যেন এক বিক্ষুব্ধ সমুদ্র, অন্তহীন মিছিল-সমাবেশের দেশে পরিণত হয়েছিল। স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি সামরিক হানাদাররা। অন্যদিকে যে কোনো আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে অনড় বীর বাঙালি। প্রাণে প্রাণে জাগ্রত হয় গণশক্তির হৃদয় সঙ্গীত ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’।
এছাড়া ৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়। অপেক্ষা করতে থাকে সকলে ৭ মার্চের জন্য। বঙ্গবন্ধু কী ঘোষণা দিবেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ