৯০ বছর পর ফিরে এলো জাহাজ!
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
পৃথিবীতে যে সকল অমীমাংসিত রহস্য আজও মানুষকে ভাবিয়ে তোলে, চিন্তিত করে তার মধ্যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল অন্যতম। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের নিকটে আসলেই নাকি সবকিছু হারিয়ে যায়। জাহাজ থেকে শুরু করে মানুষ – সবকিছু। তেমনি ৯০ বছর আগে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিলো এসএস কোটোপ্যাক্সি নামে একটি জাহাজ। কিন্তু বিস্ময়করভাবে আবার ফিরে এসেছে তা!
প্রায় নয় দশক আগে ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে ‘এসএস কোটোপ্যাক্সি’ জাহাজটি হারিয়ে যায়। মনে করা হয়েছিল বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে জাহাজটি হারিয়ে গেছে।
কিন্তু দিন কয়েক আগে কিউবার কোস্টগার্ড ঘোষণা দিয়েছে, তাদের রাডারে একটি জাহাজ ধরা পড়েছে। সেটি ক্রমশ স্রোতে ভেসে কিউবার দিকেই আসছে। একই সঙ্গে জানানো হয়, জাহাজটিতে কোনো মানুষ নেই। আর জাহাজটির নাম এসএস কোটোপ্যাক্সি’!
গত ১৬ মে হাভানার পশ্চিমে প্রথমবারের মতো জাহাজটি নজরে আসে কিউবার কোস্ট গার্ডের। জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এর পরে আরো কাছাকাছি এলে জাহাজটির কাছে যান কিউবার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। জাহাজে তারা কোনো মানুষের খোঁজ পাননি। শুধু তাই নয়, জাহাজটির নাম দেখে চমকে ওঠেন তারা।
জাহাজটি নিয়ে একটি ক্লান্তিকর গবেষণার ফলে জাহাজের ক্যাপ্টেনের লগবুক আবিষ্কার করা সম্ভব হয়। এটা এসএস কোটোপ্যাক্সির মালিক ক্লিঞ্চফিল্ড নেভিগেশন কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু ৯০ বছর ধরে জাহাজটির সাথে কী ঘটেছে তা এই লগবুক থেকে জানা যায় না।
কিউবান বিশেষজ্ঞ, রোডোলফো স্যালভাডর ক্রুজ বিশ্বাস করেন যে ক্যাপ্টেনের লগবুকটি খাঁটি। এই দলিলটি জাহাজটির অদৃশ্য হয়ে যাবার আগে জাহাজের ক্রুদের জীবন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে পরিপূর্ণ। কিতু বিস্ময়করভাবে ১৯২৫ সালের ১ ডিসেম্বর হঠাৎ করে লগবুকে আর নতুন কিছু লেখা বন্ধ হয়ে গেছে।
১৯২৫ সালের ২৯ নভেম্বর দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লস্টন থেকে এসএস কোটোপ্যাক্সি হাভানার দিকে রওনা দিয়েছিল। ক্যাপ্টেন ডব্লিউ ডে মেয়ারের নেতৃত্বে ৩২ জন ক্রু ছিলেন তাতে। জাহাজে ছিল ২ হাজার ৩৪০ টন কয়লা। দুই দিন পরে জাহাজটি নিখোঁজ হয়ে যায়। তার পর থেকে এ জাহাজটির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কী পাওয়া যাবে সেই জাহাজের ভিতর থেকে? একরাশ রহস্য নিয়ে ফিরছে এসএস কোটোপ্যাক্সি।
কাউন্সিল অব মিনিস্টারসের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবেলার্ডো কলমে ঘোষণা করেছেন, কিউবান কর্তৃপক্ষ জাহাজটির অন্তর্ধান ও পুনরায় আবির্ভাবের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য বিস্তারিত আকারে অনুসন্ধান করতে যাচ্ছে।
জেনারেল কলমি বলেন, “কি হয়েছে এটা আমাদের জন্য বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ঘটনা আমাদের অর্থনীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই এমন অন্তর্ধানের ঘটনা যেন আর না ঘটে। আজীবনের জন্য বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যভেদ করার সময় এসে গেছে।।”
উল্লেখ্য, বারমুডা ট্রায়্যাঙ্গলকে ‘ডেভিল্স ট্রায়্যাঙ্গল’ও বলা হয়। এখানে চৌম্বকীয় উত্তর দিকের পরিবর্তে প্রকৃত উত্তর দিক নির্দেশিত হয়, যা জাহাজের নাবিকদের বিভ্রান্ত করে। পুয়ের্তো রিকো, মায়ামি এবং বারমুডা- তিনদিকে এই তিনটি জায়গাকে রেখে যদি সরলরেখা টানা হয় তাহলে সমুদ্রেপ উপরে যে ত্রিভূজ দাঁড়ায়, তাই বারমুডা ট্রাইঅ্যাঙ্গল হিসেবে কুখ্যাত। ওই এলাকায় বহু জাহাজ এবং বিমান নিখোঁজ হয়ে গেছে।
নরওয়ের আর্কটিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, ওই এলাকায় সমুদ্রের তলায় তারা বড়মাপের বেশ কয়েকটি আগ্নেয়গিরির সন্ধান পেয়েছেন। সেই আগ্নয়েগিরি থেকে ক্রমাগত বেরিয়ে আসছে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস। শুধু মিথেনই নয়, তার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে আরো কয়েক ধরনের গ্যাস, যার অনেকগুলোই বিষাক্ত। ফলে ওই এলাকায় সমুদ্রে কোনো জলজ প্রাণীও নেই বলে ধারণা গবেষকদের।
গবেষকদের দাবি, মিথেন সমুদ্রে তলদেশ থেকে উঠে এসে সমুদ্রের পানিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলছে। মিথেনের চাদরে ঢেকে গেছে গোটা এলাকা। উচ্চতা অন্তত ১৫০ ফিট। ফলে কোনো নাবিক বা পাইলটের পক্ষে চারপাশ দেখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণেই একের পরে এক দুর্ঘটনা ঘটেছে বারমুডা ট্রাইঅ্যাঙ্গলে।
তবে অনেক বিজ্ঞানী বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের এই ভূতুড়ে বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করতে চান। কিন্তু ৯০ বছর পর এসএস কোটোপ্যাক্সির ফিরে আসা বোধহয় তাদের ধারনা বদলাতে সাহায্য করবে।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া